পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর। ১৭৯ ঈশ্বরচন্দ্ৰ নিজের ভ্ৰম বুঝিতে পারেন। কিন্তু তখন, প্ৰকাশ করিলে পাছে ভ্রাতা ও পিতার আহারেঙ্গ ঘূণা জন্মে, এজন্য তিনি উহা মুখে করিয়াই রাখিয়াছিলেন। সকলের আহার শেষ হইলে তিনি বাহিরে গিয়া বামন করিয়া ফেলেন, কিন্তু পিতা বা ভ্ৰাতাকে সে কথা তখন প্ৰকাশ করেন। माझे । দরিদ্রের সন্তান ঈশ্বরচন্দ্ৰ শয়ন সম্বন্ধেও বাল্যকালে কঠোর ব্ৰহ্মচৰ্য্য পালন করিয়াছিলেন। দৈর্ঘ্যে দুইহস্ত ও প্রস্থে দেড়হস্ত পরিমিত বারাণ্ডার উপর কখনও মাদুর বিছাইয়া, কখনও বা আমনই শয়ন করিতেন। বারাণ্ডার আলিসা তঁহার মস্তকে উপাধানের কার্য্য করিত। বাল্যকাল হইতেই ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিলাসিতার বিরোধী ছিলেন। দরিদ্রের সন্তান পরিণামে পৰ্যাপ্ত অর্থে পাৰ্জন করিয়া বিলাসী হইয়াছেন। এরূপ দৃষ্টান্ত বিরল নহে। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্ৰ কায়মনোবাক্যে বিলাসিতার বিরোধী ছিলেন। বালে, “মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়” পরিতে আরম্ভ করিয়া বাৰ্দ্ধক্যেও তাহার চাল বিগড়াইয়া যায় নাই। প্রকৃতই তেঁাহার জননী স্বহস্তে চরকায় সূতা কাটিয়া, বস্তু বয়ন করিয়া, পুত্রের ব্যবহারের জন্য পাঠাইতেন। সেই মোটা সূতার কাপড় পরিয়া অকুষ্ঠিত চিত্তে ঈশ্বর চন্দ্ৰ কলেজে যাইতেন । পাঠে ঈশ্বরচন্দ্র কখনও অবহেলা করেন নাই। অখণ্ডমনোযোগের সহিত তিনি পাঠাভ্যাস করিতেন। ঠাকুরদাস কোন বিষয়ে পুত্রের সামান্য ত্রুটি দেখিলে কঠোর শাসন করিতেন, এজন্য পুত্ৰও বিশেষ সতর্কভাবে থাকিতেন। তথাপি মধ্যে মধ্যে তিনি পিতার নিকট হইতে শাসনবাক্য শুনিতেন। পিতার শাসনভয়ে তিনি পরিশেষে পুথির সাহায্যে বিস্মৃতি প্রায় সন্ধ্যার মন্ত্র আয়ত্ত করেন।