এই বলিয়া মধুমতী নিরস্ত হইলেন। করালী কিছু বলিলেন না। অনেকক্ষণ নীরবে বসিয়া বসিয়া উঠিয়া গেলেন। পৃথক্ শয়নগৃহে গিয়া দ্বাররুদ্ধ করিলেন। করালীও দ্বার রুদ্ধ করিয়া শয়ন করিলেন।
পর দিন উভয়ে উভয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন না। ইচ্ছাপূর্ব্বকই সাক্ষাৎ করিলেন না। বিশেষ করালী অত্যন্ত ধর্ম ভীত; তিনি বুঝিয়াছিলেন, যে অন্য স্বামী বর্তমানে তাহার সহিত আদরিণীর বিবাহ ধর্ম্মতঃ বিবাহ নহে! এবং আদরিণী তাহার ধর্ম্মপত্নী নহে। সে স্থানে তাহার সহিত সহবাস ঘোর পাপাচার। এদিকে মধুমতীর সহবাস পরিত্যাগ অপেক্ষা প্রাণ পরিত্যাগ সহজ। তিনি কর্ত্তব্যবিনূঢ় হইয়া সমস্ত দিন দ্বাররুদ্ধ করিয়া কাঁদিতে লাগিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা অতীত হইয়া চারি পাঁচ দণ্ড রাত্রি হইল। প্রথম রাত্রে জ্যোৎস্না। গোপাল অবধারিত সময়ে গঙ্গাতীরে আসিয়া দাঁড়াইল। কূলে কাহাকে দেখিতে পাইল না—কিন্তু দেখিল যে, বক্ষঃপরিমিত জলে দাড়াইয়া একজন স্ত্রীলোক গাত্রধৌত করিতেছে। গোপাল চিনিল যে সেই আদরিণী। বলিল, “আমি আসিয়াছি।”