পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

 কিন্তু দুজনেই জানতো না একটা কথা।

 তারা জানতো না যে নিরুপদ্রব, শান্তভাবে ডাক্তারী ও ওষুধের ক্যানভাসারি করতে তারা যাচ্ছে না― তাদের অদৃষ্ট তাদের দু’জনকে এক সঙ্গে গেঁথে নিয়ে চলেছে এক বিপদ সঙ্কুল পথ যাত্রায় এবং তাদের দুজনের জীবনের এক অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার দিকে।



 জাহাজ সমুদ্রে পড়েছে। বিস্তীর্ণ জলরাশি ও অনন্ত নীল আকাশ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না।

 একদিন দুপুরে বিমল সুরেশ্বরকে উত্তেজিত সুরে ডাক দিয়ে বল্লে― চট্ করে চলে আসুন্, দেখুন কি একটা জন্তু!

 জন্তুটা আর কিছু নয়, উড্ডীয়মান মৎস্য। জাহাজের শব্দে জল থেকে উঠে খানিকটা উড়ে আবার জলে পড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। জীবনে এই প্রথম সুরেশ্বর উডীয়মান মৎস্য দেখলে― ছেলেবেলায় চারুপাঠে ছবি দেখেছিল বটে। মাঝে মাঝে অন্য অন্য জাহাজের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রায়ই কলিকাতাগামী জাহাজ।

 ওরা জাহাজের নাম পড়চে― ওরা কেন, সবাই। এ অকূল জলরাশির দেশে অন্য একখানা জাহাজ ও অন্য লোকজন দেখতে পাওয়া যেন কত অভিনব দৃশ্য! শত শত যাত্রী ঝুকে পড়েচে সাগ্রহে রেলিংয়ের ওপর, নাম পড়চে, কত কি মন্তব্য করচে। ওরাও নাম পড়লে― একখানার নাম ড্যালহাউসি, একখানার নাম ইরাবতী, একখানার নামের কোন মানে হয় না― কিলাওয়াজা― অন্ততঃ ওরা তো কোন মানে