পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
কারাকাহিনী।

জেলের বাগান পরিষ্কার রাখিবার ও গাছ লাগাইবার ভাযর পড়িল। ভুট্টা বাগান, আলুর আল পরিষ্কার করা, ও মাটি দেওয়া —এই ছিল বেশীর ভাগ কাজ।

 দুই দিন পরে মিউনিসিপালিটির পুকুর খুঁড়িবার জন্য আমাদিগকে পাঠান হইল। সেখানে মাটি খুঁড়িতে হইত, মাটির ঢিপি করিতে হইত, আর সে মাটি বহিয়া অন্যস্থানে আনিতে হইত। কাজটা শক্তই ছিল। দুই দিন পর্য্যন্ত সে কষ্ট আমরা পাইয়াছিলাম। কাজে লাগার পরে আমাদের শরীর ফুলিয়া উঠিল, কিন্তু মাটিচিকিৎসায় তাহা সারিয়া গেল।

 জায়গাটা জেল হইতে ৪।৫ মাইল দূরে। আমাদের ট্রলিতে করিয়া লইয়া যাওয়া হইত। পুকুরের মধ্যেই খাবার তৈয়ারী করিতে হইবে, তাই আটা, বাসনপত্র ও কাঠ সরে লইয়া যাইতে হইত। এততেও ঠিকাদার খুসী নয়। আমরা কাফ্রিদের সমান কাজ করিতে পারিতাম না। দুই দিন খুব করিয়া পুকুরের কাজ করাইয়া লওয়া হইল, তার পর আমাদের অন্য কাজ দেওয়া হইল। এতদিন ব্যবস্থা ছিল যে, নানারকম কাজ করিতে পারিলেও ভারতবাসীদের একই কাজে লাগান হইবে। এবার হইতে তাহাদের কাজ অনুসারে ভাগ করিয়া দেওয়া হইল। কেহ কেহ সৈনিকদের সমাধির পাশে ঘাস উঠাইয়া সাজাইবার জন্য চলিয়া গেলেন, অন্য সকলকে সমাধিক্ষেত্র পরিষ্কার রাখিবার কাজে নিযুক্ত করা হইল। এইভাবে কাজ চলিল। ইতিমধ্যে বরটন মোকদ্দমার পর প্রায় ৫০ জন ভারতবাসী মুক্তি পাইলেন। তখন প্রায়ই আমাদিগকে বাগানের কাজ দেওয়া হইত। সেখানে মাটি কাটা, ফসল তোলা, জঞ্জাল একত্র করা— ইত্যাদি কাজ ছিল। একাজ শক্ত বোধ হইত না, এবং ইহাতে শরীরও ভাল হইত। একাস্বরে ৯ ঘণ্টা এই কাজ করিতে প্রথম প্রথম প্রাণ শেষ হইত, কিন্তু অভ্যাস হইয়া গেলে বিশেষ কিছু কষ্টবোধ হইত না।