পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
কারাকাহিনী।

আমার হৃদয় তাঁহার প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ হইল। প্রশ্ন করিয়া প্রথম পায়খানা পরিষ্কার করার কথা জানিতে পারিলাম। একবার প্রধান দারোগা সেই কাফ্রি দাবোগাকে আদেশ দিয়াছিলেন যে, ভারতবাসীদের জন্য বিশেষ করিয়া যে পায়খানা, তৈয়ার করা হইয়াছে তাহা পরিষ্কার করার জন্য ভারতবাসীদের যেন লাগান্ত হয়। দাবোগা আমার কাছে আসিয়া দুই জন লোক চাহিল। আমি ত নিজে একাজ ভাল বলিয়াই মনে করিতাম, আমার এরূপ কাজ করিতে একটুও লজ্জা হয় না, তাই আমি গেলাম। আমার মতে, আমাদের এরকম কাজ করার অভ্যাস থাকা উচিত। আমরা এসব কাজ খারাপ মনে করি, তাই নিজেদের উঠান ও পায়খানার খারাপ অবস্থা অনেকবার আমাদের চোখে পড়ে; এমন কি, এইভাবেই মৃগী প্রভৃতি অনেক মন্দ রোগের সৃষ্টি বা বিস্তার আমাদের জন্য হয়। আমরা স্থির ধারণা করিয়া বসিয়াছি যে, পায়খানা খারাপ জায়গা, তাই সেখানকার দুর্গন্ধে আমরা দূষিত হই। এই সমস্ত কাজ না করার দণ্ডস্বরূপ একজন ভারতবাসীকে নির্জ্জন কারাকক্ষে রাখিবার আদেশ হইয়াছিল। দণ্ড পাইল, তাহাতে কিছু আসিয়া যায় না, কিন্তু এই দণ্ডভোগের কোনও প্রয়োজনই ছিল না, আর একাজ করিতে দ্বিধা বোধ করাও ঠিক নয়। যখন আমি একাজ করিতে প্রস্তুত হইলাম, তখন দারোগা অন্য সকলকেও একাজে আসিতে বলিল। পূর্ব্বোক্ত আদেশের কথা সকলের মধ্যে ছড়াইয়া পড়িল, এবং কাজ অতি সামান্য হইলেও মিঃ উমর ওস‍্মান ও মিঃ রুস্তম আমার সাহায্যের জন্য ছুটিলেন। এ কথার উল্লেখ করিয়া শুধু ইহাই দেখাইতে চাই যে, গবর্ণমেণ্ট যে কাজ করাইতে চাহিয়াছিলেন ইঁহারা সে কাজ করিতে কোনই সঙ্কোচ বোধ করেন নাই, গৌরবই বোধ করিয়াছিলেন। যে কাজ দেওয়া হয় তাহা করিতে অস্বীকার করিলে আমরা সত্যাগ্রহের অনুপযুক্ত হইয়া পড়ি।