বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মাঝির ছেলে

চাঁদ মাঝির ছেলে বাঁকাকে তাদের সন্ধানে পাঠান হল। ঘণ্টাখানেক পরে যাদববাবু একা ফিরে এলেন। ভদ্রলোকের মুখখানা শুকিয়ে গেছে, দেখলেই বুঝা যায় একেবারে শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ জিজ্ঞাসা করবার আগেই এত দেরি হবার কারণটা সকলকে শুনিয়ে দিলেন। চাঁদ ও তার ছেলে কোথায় আছে তাও জানা গেল।

 সে এক চমকপ্রদ গল্প।

 হাত দেখে কৈলাস চক্রবর্তী অনেক কথা বললেন, তারপর হঠাৎ গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ বাড়ি ছেড়ে সে বেরিয়েছে কেন? প্রশ্ন শুনেই তো যাদববাবুর বুকটা ধড়াস্‌ করে উঠল। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন, আজ বাড়ি ছেড়ে বার হলে কি হয়? চক্রবর্তী জবাবে বললেন যে, সকলের কি আর হয়, যাদববাবুর হবে।

 কি হবে চক্রবর্তী প্রথমে বলতেই চান না, শেষে যাদববাবুর অনেক পীড়াপীড়িতে বললেন। যাদববাবু অথবা তার সঙ্গীর আজ একটা বিপদ হবে। কি বিপদ? যে কোন রকম বড় বিপদও হতে পারে, আবার ছোট রকমের বিপদও হতে পারে। প্রাণহানি হওয়াও আশ্চর্য নয়, আবার শুধু হোঁচট খেয়ে পায়ের আঙ্গুল মচকে যাওয়াও সম্ভব।

 বুড়ো চাঁদ মাঝি সব শুনছিল, ফিরবার সময় সে হঠাৎ বেঁকে বসল যাদববাবুর সঙ্গে সে যাবে না! চক্রবর্তী মশায়ের গণনার পর যাদববাবুর সঙ্গী হতে সে আর কোনমতেই রাজী নয়। সঙ্গীর ওপর দিয়ে বিপদটা কেটে যাবার সম্ভাবনা যখন আছে, যাদববাবুই বা একা সঙ্গীছাড়া হয়ে কি করে আসেন! বুঝিয়ে, তোষামোদ করে, ধমক দিয়ে, ভয়ে দেখিয়ে কিছুতেই চাঁদ মাঝিকে রাজী করাতে না পেরে তিনি অগত্যা চক্রবর্তী মশায়কে একজন সঙ্গী দেবার অনুরোধ জানালেন। কেবল সঙ্গে যাবার জন্য ভালরকম পুরস্কার পাবে সঙ্গীটি।

 কিন্তু চক্রবর্তী মশায় শুধু হাসলেন। ওভাবে কি আর অদৃষ্টকে ফাঁকি দেওয়া যায়। যার সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সেই যাদববাবুর সঙ্গী, এখন কি আর সঙ্গী বদল করা যায়! তার চেয়ে এক কাজ করলে বরং চলতে পারে, এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি একটি টাটকা মাদুলি