২৫
মাঝির ছেলে
কেমন করে লাফায় দেখবে বলে অনেক আশা করে পরেশ এঁটো খুস্তি ধুয়ে গোয়াল ঘরে খড়ের আগুন জ্বেলে কত কষ্টে খুন্তিটা পুড়িয়েছিল, মনটা তার খারাপ হয়ে গেল।
গোয়াল ঘরে খুন্তি গরম করার আগুনটা তাড়াতাড়িতে সে নিভিয়ে আসে নি মন খারাপ করে সে ঘরে যায়, আর এদিকে গোয়াল ঘরের আগুনটা জ্বলতেই থাকে।
ঘরে গিয়ে পরেশ নাগাকে জিজ্ঞাসা করে যে ব্যাপারখানা কি হল? ঘুমে চোখ জড়িয়ে এলে নাগার রসিকতার সাধটা বোধ হয় জোরালো হয়, ফিসফিস করে সে জানায় যে ব্যাপার বড় ভয়ানক, দুটি চোরকেই খুন করে ছোট কর্তা পুতে ফেলেছেন। বলতে বলতে নাগা জোরে জোরে শ্বাস টেনে ধোঁয়ার গন্ধ শোঁকে আর কান পেতে শোনে খাপছাড়া একটা শব্দ। বলে, ‘গাই বাছুর য্যান দরবড়ায় পরেশ-কাকা।’
পরেশ ও সায় দিয়ে বলে, ‘হ, দরবড়ানিই য্যান শুনি।’
আগুনের কথাটা হঠাৎ মনে পড়ায় পরেশ লাফিয়ে উঠে। ছুটে যায় গোয়াল ঘরের দিকে, সঙ্গে যায় নাগা। আগুন তো আর কাছে গিয়ে দেখতে হয় না, ঘরের বাইরে পা দিয়েই দু’জনের চোখে পড়েছে, এক দিকের বেড়া ধরে উঠে আগুন সবে চালা ছুঁয়েছে। কাছে গিয়ে দুচোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে হাঁ করে দাড়িয়ে থাকে হতভম্ব মানুষের চেয়ে বেশী হতভম্ব হাবা জন্তুর মত।
নাগা বলে, ‘গাই বাছুর ছাইড়া দাও গিয়া পরেশ-কাকা, আমি সগগ্লরে ডাক দেই।’
কিন্তু পরেশের কি কাণ্ডজ্ঞান আছে যে গরু-বাছুরের বাঁধন খুলতে যাবে, নাগার হাত ধরে সে কাঁদ-কাঁদ হয়ে বলে, ‘কর্তাগো ডাকিস্ না নাগা, কইস্ না আমি আগুন দিছি। কর্তা, আমারে কাইটা ফেলব।’
নাগা বলে, ‘খাস সময় পাইছ কাঁদনের। পাগল হইছ নাকি?’
ব’লে দু’হাতে পরেশকে ধরে ঝাঁকি দিতে দিতে সে গলা ফাটিয়ে চোঁচাতে আরম্ভ করে, আগুন আগুন। তারপর ছুটে যায় গোয়াল ঘরের ভিতরে গরু বাছুরগুলির বাঁধন খুলে দিয়ে সে বাইরে আসতে আসতে