মাঝির ছেলে
৩২
ঝগড়া সে করেছে মানুষের সঙ্গে, ঝগড়া যখন চরমে ওঠে আর গালাগালির আদান প্রদান অশ্রাব্য হয়ে ওঠে, তখন হয়তো হাতাহাতির সম্ভাবনা ঘটা আশ্চর্য নয়, কিন্তু সময় মত সেটা টের পেয়ে স্থান ত্যাগ করে হাতাহাতি এড়ানোর সুযোগও যথেষ্ট থাকে। বাকযুদ্ধের নিয়ম মানে না, শুরুতেই পিটাতে শুরু করে, এ আবার কোন দেশী মানুষ!
ছাড়ান পেয়ে পরেশ কাঁদতে কাঁদতে মাধববাবুর কাছে নালিশ করতে গেল, খানিক পরেই নাগাকে ডাকতে এল কণিকা।
‘জ্যোঠামশায় তোকে ডাকছে নাগা।’
কথাটি না বলে নাগা বাড়ির মধ্যে চলে যায় দেখে ভারিক্কি গিন্নীদের মত মুখ করে বলল, ‘শোন নাগা, শোন, রাগ করেছিস নাকি, বকেছি বলে? কথা শুনিস না। তাই তো তোকে বাকি।’
কণিকা ভেবেছিল এইটুকু আদরেই নাগা গদগদ হয়ে যাবে, কিন্তু রাগটা নাগার বেড়েই গেল। তার মনে হল, চাকরকে অপমান করে মায়া হওয়ায় বাড়ির গিন্নী যেন উদারতা দেখিয়ে দু’টি মিষ্টি কথা বলছেন তাকে। গট্ গট্ গঢ় করে সে অন্দরে চলে গেল।
বড় ঘরের দাওয়ায় পাটি বিছানো চৌকিতে বিচারকের মত বসে মাধববাবু গড়গড়া টানছিলেন, নীচে উবু হয়ে বসেছিল পরেশ। বাড়ির সকলে আশেপাশে দাড়িয়েছিল। মজা দেখবার আশায়। নাগা এসে দাড়াতেই মাধববাবু গম্ভীর আওয়াজে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ওকে তুই মেরেছিস কেন রে নাগা?’
‘আমাকে গাল দিচ্ছিল।’
লণ্ঠনের আলোয় নাগার মুখ ভাল করে দেখা যাচ্ছিল না, দিনের বেলা হলে তার মুখ দেখে মাধববাবু ভয় পেয়ে যেতেন। নানা ঘটনায় মেজাজ তো তার বিগড়েই ছিল, তার ওপর এই অপমান। দশজনের সামনে এমনভাবে কয়েদীর মত দাঁড় করিয়ে একজন তাকে বিচার করবে, নাগা, তা কোনদিন সহ্য করতে পারত না, -বিচার যেই করুক। আটখামারে একবার ঠিক এই রকম মারধোর করার জন্যই দশজন মান্যগণ্য ভদ্রলোকের কাছে তার বিচার হয়েছিল, সভাপতি কড়া সুরে জেরা আরম্ভ