ক্ষণেক পরে শৈলেশ্বর আসিয়া উপস্থিত হইলেন ও নরেন্দ্রকে আশীর্বাদ করিলেন।
নরেন্দ্রনাথ গোস্বামীকে প্রণাম করিতে বিস্মৃত হইলেন।
শৈলেশ্বর জিজ্ঞাসা করিলেন, “স্থিরপ্রতিজ্ঞ হইয়াছ?”
গম্ভীর ও ঈষৎ কর্কশস্বরে নরেন্দ্রনাথ বলিলেন, “হইয়াছি।”
উভয়ে গহ্বরে প্রবেশ করিলেন।
গহ্বরে পূর্বদিনের ন্যায় অতি উজ্জ্বল আলোক জ্বলিতেছিল, সেই আলোকচ্ছটায় শৈলেশ্বর যাহা দেখিলেন, তাহাতে চমকিত হইলেন। নরেন্দ্রনাথের ললাট গণ্ডস্থল, স্কন্ধ, বাহু ও বক্ষস্থল রক্তচন্দনে একেবারে প্লাবিত রহিয়াছে।
শৈলেশ্বর। পাপিষ্ঠ! পরস্ত্রী আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করিতে পারিলে না?
নরেন্দ্র। পরস্ত্রী-আকাঙ্ক্ষা রাখিও না।
শৈলেশ্বর। হেমলতাকে এ জীবনে আর দেখিতে চাহ না?
নরেন্দ্র। তাহা স্বীকার করিতে প্রস্তুত আছি।
শৈলেশ্বর। তবে যবনীকে বিবাহ করিতে স্বীকার আছ?
নরেন্দ্র। এ জীবনে নহে।
শৈলেশ্বর ক্ষণকাল নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন; আবার বলিলেন, “তবে প্রতিজ্ঞপালনে প্রস্তুত হও। খড়্গ ত্যাগ কর, কালীর সম্মুখে জীবনদানে প্রস্তুত হও।”
নরেন্দ্র। আমি যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, তাহা পালন করিয়াছি। আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিব বলিয়াছিলাম।
শৈলেশ্বর। মুঢ়। সিংহের গহ্বরে আসিয়াও জীবনের প্রত্যাশা কর? এস্থলে কে তোমার সহায় হইবে?
নরেন্দ্র। এই অসি আমার সহায়।
শৈলেশ্বর নিঃশব্দে গহ্বরের একস্থান হইতে আপন অসি বাহির করিলেন। উদয়পুরে একবার যেরূপ যুদ্ধ হইয়াছিল, অদ্য আবার দুইজনে সেইরূপ অসি ও ঢাল লইয়া যুদ্ধ। নরেন্দ্র সেদিন অপেক্ষা অধিক সাবধানে অধিক যত্নে যুদ্ধ করিতে লাগিলেন, কিন্তু সে যত্ন বৃথা। সিংহবীর্য শৈব অল্পক্ষণ মধ্যেই নরেন্দ্রকে পরাস্ত করিয়া তাঁহার অসি কাড়িয়া লইলেন।
শৈলেশ্বর। কেবল পূজা ব্যবসায়ে এই ক্লেশ শুক্ন হয় নাই। রাজস্থান-ভূমি বীরপ্রসবিনী, যুদ্ধকালে শৈব-গোস্বামিগণও বীর্যপ্রকাশে রাজস্থানে অগ্রগণ্য। বালক! তোমার সহিত যুদ্ধ করিলাম, এই আমার কলঙ্ক রহিল।
নরেন্দ্র। আমি তাহার জন্যও প্রস্তুত আছি, তোমার যাহা ইচ্ছা, যাহা সাধ্য কর।