পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী পিছনের দিকে, মাঝখানে সিড়ির নীচে একটা দরজা আছে সেটা বন্ধ করিলে বাড়ীর সঙ্গে ঘর দু’খানার আর যোগ থাকে না। আগে যশোদা দরজাটা নিয়মমত বন্ধ করিত, আজকাল গ্ৰাহও করে না । এর দু’টি প্রধান কারণ আছে। প্রথমতঃ তার গায়ে এত জোর যে এ বাড়ীতে এমন একটিও পুরুষ নাই যে, তার হাতের একটা চড় খাইয়া দাড়াইয়া থাকিতে পারে, দ্বিতীয়তঃ নিজে সে যে স্ত্রীলোক এটা তার সব সময় খেয়ালও থাকে না । শেষোক্ত কারণটা যশোদার শত্ৰুও স্বীকার করে। যশোদার সবচেয়ে বড় শক্ৰ তার ছেলেবেলার সখী কুমুদিনী, পাড়াতেই স্বামীপুত্র সংসার লইয়া সে বাস করে। যশোদার কথা উঠিলেই তাকে বলিতে শোনা যায় : “ওটা কি মেয়েমানুষ ? ও মেয়েমানুষের বাবা !” আরও অনেক কথা সে বলে, বলিতে বলিতে ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত হইয়া উঠে। তারই সংজ্ঞা অনুসারে যশোদা যে মেয়েমানুষ নয় মেয়েমানুষের বাবা, এ কথাটা ভুলিয়া গিয়া নাক সিটকাইয়া তীব্র আবেগের সঙ্গে সে আবার বলে, “পুরুষের গাদি বাড়ীতে, তার সবকটা হয় মাতাল নয় গুণ্ড, মেয়েমানুষ হয়ে কি করে যে ওদের মধ্যে থাকে, মাগো !” একটু খাপছাড়া জীবন-যাপন করে বৈকি যশোদা, একটু অনন্যসাধারণ হয় বৈকি তার রীতিনীতি চাল-চলন, কিন্তু খুব বেশী বে-মানান যেন তার পক্ষে হয় না । এরকম অবস্থায় অন্য কোন স্ত্রীলোক হয়। পুরুষের আশ্রয় খুজিত, নয় মানুষের মতবাদ ও নির্দেশের চাপে ধ্বংস হইয়া যাইত, যশোদা কিছুই করে নাই । জীবনযাপন করে সে স্বাধীন, কারও কাছে তার কোন প্ৰত্যাশা নাই, নিন্দ প্ৰশংসা সে গ্ৰন্থ করে না, কারও দরদের জন্য কঁাদিয়াও মরে না । বিপদে-আপদে তারই কাছে মানুষ উপকার পায়, পুরুষের কাছে যে কাজ পাওয়া কঠিন যশোদার কাছে তাই পাওয়া যায়। লম্বা-চওড়া শক্ত-সমর্থ শরীরটাতে তার নারীসুলভ লাবণ্য ও কোমলতার চিরদিন এমন অভাব যে, বয়স যখন আরও কম ছিল তখনও কোনও পুরুষের সঙ্গে তার বৈধ বা অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক থাকিতে পারে একথাটা মনে আনিতেও লোকের কেমন সঙ্কোচ বোধ হইত, মনে হইত, না, তা হয় না । একটা গুজব শোনা যায়। দশ-বার বছরের আগেকার কথা, যশোদা যখন সবে ভদ্র অভদ্র নির্বিবশেষে ঘর-ভাড়া দিতে আরম্ভ করিয়াছে। সত্যপ্ৰিয়ের বাগানবাড়ীটা তখন নাকি কেবল ঝোপ-ঝাপে ভৱা বাগান ছিল, চারিদিকের প্রাচীর ছিল ভাঙ্গা । ቆቅቅ»