পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰতিবিম্বৰ শাশুড়ী ঘরে আসায় তাকেও তাৱক টিপ করে একটা প্ৰণাম করল । চাকরীর ইন্টারভিউর অজুহাতে এক ঘণ্টা পরেই তারক ছুটি পেল। কিন্তু এই এক ঘণ্টার জামাই-আদৱ ভোগ করেই তার মনে হল জগতে আর সব মিথ্যা । এ আব্দর ছাড়া আর কিছু সত্য নেই জগতে । এ বাড়ির বৈঠকখানায় দাড়িয়ে নিজের খুড়শ্বশুরের মুখে সে এইমাত্র নিশ্চয় শোনে নি যে দাদার জামাই বাড়িতে এলে তাকে জুতিয়ে তাড়াতে হয়, গোপালভাড় কিম্বা বটতলার কোন হাসিতামাসার বইয়ে এরকম একটা অভদ্র গল্প বোধ হয় সে কোনদিন পড়েছিল। জুতো মেরে যাকে তাড়িয়ে দিতে ইচ্ছা হয় তাকে কোন মানুষ এত সম্মান, এত প্রশ্রয়, এত আদর কখনো দিয়ে যেতে পারে এতক্ষণ ধরে ? এক মুহূর্তের জন্যও তো তার মনে হল না। কারো ব্যবহারে এতটুকু ছলনা আছে, অভিনয় আছে। ট্রামের রাস্তায় পৌছে ফুটপাতে ছোট একটি ভিড় দেখে তারক উকি মাৱল। উচু রোয়াকে ঠেসান দিয়ে ফুটপাতে পা ছড়িয়ে বসে আছে একটি স্ত্রীলোক, মাথাটা বুকে নামিয়ে যেন ঘুমোচ্ছে। তার দুই উরুতে উপুড় হয়ে হাত পা মাথা সবগুলি প্ৰত্যঙ্গ এলিয়ে দিয়ে যেন ঘুমিয়ে আছে তিন চার বছরের একটা ছেলে। ছেলেটা একেবারে উলঙ্গ, বাকী মেরুদণ্ড আর পাঁজরের হাড়গুলির চেয়ে তার মাংসহীন পাছার শতকুঞ্চনে কুঞ্চিত চামড়াই যেন বরফ-শৈত্যের শিরশির শিরশির শিরশির শিরশির শিহরণ । স্ত্রীলোকটির সায়া সেমিজ নেই। অথচ শাড়িখানা তার এক অত্যাশ্চৰ্য বিস্ময়। আগেকার দশ বারো টাকা দামের শাড়ি । এ সব শাড়ি তোৱঙ্গে তোলা থাকে । তোরঙ্গ থাকে। ঘরে । ঘর আর তোরঙ্গ যে আছে, শপথ করে বলা যায়। যেমন বলা যায় স্ত্রীলোকটির যৌবন আছে। আরও যৌবন ছিল, এখন খানিকটা আছে। তারকের মহকুম-সহ রঘোষা গায়ে বিশ বছরের বকুল মরেছিল। চার পাঁচ মাস ধরে, আজ একটু ভাত পরশু একটু ফ্যান আন্ধা গাছের পাতা জংলী লতা খেয়ে ধীরে ধীরে তিলে তিলে সে হয়ে গিয়েছিল চামড়াঢাকা কঙ্কাল, এ জীলোকটি ক’দিন আগেও খেয়েছে, মোটামুটি খেয়েছে, তারপর হঠাৎ একদিন একেবারে পুরোপুরি না খাওয়া নুরু হওয়ায় যৌবন ফুরিয়ে 0806