পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি C. J.C. চলে বড় বড় আড়তে, রোজ দু’বার বায়োস্কোপ দেখান হয়, হাকিমরা বসবাস করে । কিছুই সে প্রায় সঙ্গে নেয়নি। শুধু ছেড়া ধুতি আর পিরানের বাণ্ডিলটা, তার মধ্যে কন্ধে আর তিনপুরুষের তাবিজটা, তামার। বাহুতে আঁটা তাবিজটা খুলে সে বাণ্ডিলে ভরেছিল অবিশ্বাসে। ফেলে দিতেও পারত, তা দেয়নি। কোনো কিছু ফেলে দেবার স্বভাব তার নয়। তাছাড়া, গায়ে না রাখুক একেবারে ফেলে দিতে भनbाख श्रृंउ श्रृंउ काद्रछिल । কুজা শুধিয়েছিল সসন্দেহে, যাও কই ? আসি, দেইখা আসি। কিছু নি কারণ যায়। কুজার মনে বুঝি খটকা লেগেছিল তার হাতের বাণ্ডিল আর ভাবসাব দেখে । গায়ের আরও কত লোক এরকম “আসি’ বলে চলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি । ক্ষীণ আর্তসুরে সে বলেছিল, কই যাও কইয়া যাও, মরা মুখ দেখবা । কমু অনে। ফির্যা আইস কমু অনে। হন হন করে এগিয়ে গিয়েছিল ছিদাম কথা আদানপ্রদানের সীমানা ছাড়িয়ে, পালিয়ে যাওয়ার মত। হাপরের মত ফুসতে শুরু করেছিল তার দুর্বল ফুসফুসটা ওইটুকু জোরে হেঁটে । তারপর কতকাল কত পথ হেঁটেছে ছিদাম, কত দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে, বাজারে বাজারে ফালতু ফেলে দেওয়া পচা তরকারী মাছ ডিম কাডাকাড়ি করে বাগিয়ে নিয়ে কঁাচার্কাচ খেয়ে খেয়ে, এর বাগানের ফলটা ওর বাগানের মূলটা চুরি করে করে, এ কেন্দ্রে খিচুডি নিয়ে আরেক কেন্দ্ৰে পাবার আশায় ছুটতে গিয়ে দম নিতে পথের ধারে ছায়ায় বা রোদে, রোয়াকে বা ধুলো কাদায় বসে শুয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধুকে আর ধুকে । এমনিভাবে গ্রীষ্ম গেছে, বর্ষা গেছে, শীত গেছে। কত যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে ছিদাম । দেখেছে শুনেছে সে অনেক কিছু, নিজেও করেছে। অনেক কাণ্ড। তার মধ্যে গাবোকে বৌ সাজিয়ে তার কৈালে হাড়ে চামড়ায় এক করা কুড়ানো বাচ্চাটাকে দিয়ে দুস্থ গৃহস্থ সেজে ভিক্ষা করার অভিজ্ঞতা ছিদাম জীবনে ভুলবে না, ও যেন গজেন অপেরার যাত্রাগান। কাদের ক'শ বছরের পুৱানো দালানের এক পরিত্যক্ত অংশে কোলাকুলি দুটা দেয়াল আর এপাশে ভাঙ্গা ইটের ভূপের মধ্যে তিনকোণা ছাদহীন শাপ-শেয়ালের বাসটিতে সে আশ্ৰয় নিয়েছিল, গাছতলায় থাকলে পুলিশে জুলুম করে বলে, শীতে জমে যেতে হয় বলে। এখানে আকাশের হিম পড়ুক তার গায়ে, দু’কোণা ভাঙ্গা দেয়াল