পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

၇ဓါးရ সন্ন্যাসীর গল্প শুরু হয়ে গেল। কৃষ্ণেন্দুর কাটাকাটা কথা আর জেরায় সকলে একটু শ্ৰান্ত হয়ে পড়েছিল। দশটা আজে বাজে খেই ছাড়া কথার মিশাল না দিয়ে এতক্ষণ একমনে কেবল একটা বিষয়ে তারা কথা বলতে পারে না, তা সে যতবড় গুরুতর বিষয়ই হোক । হেরম্বের একটি গুরু ছিলেন, একজন বিখ্যাত তান্ত্রিক সাধু। এখন তিনি দেহরক্ষা করেছেন। তার অলৌকিক শক্তি ও ক্রিয়াকলাপের কাহিনী শুনতে শুনতে সকলে আরাম বোধ করে । অন্যমনে সেকথা ভাবতে ভাবতে কৃষ্ণেন্দু খানিক শোনে খানিক শোনে না । স্নানাহারের তাগিদে একসময় বৈঠক খতম হয়ে যায়। বিদায় নেবার জন্য প্ৰস্তুত হয়ে সকলের মুখপাত্র হিসাবে জগৎ দাস বলে, “তবে ওই কথা রইল কেষ্টবাৰু? ‘কোন কথা ? হীরেন তাড়াতাড়ি বলল, ‘হঁ্যা ওই কথাই রইল বৈকি। চারিদিকের অবস্থা দেখে বুঝে শুনে কেষ্টবাবু যাহোক একটা ব্যবস্থা করবেন।” এত বেলায় গায়ের পথঘাট নির্জন হয়ে এসেছে। গাছে গাছে শুধু হনুমানের লাফালাফি। এ অঞ্চলে খুব হনুমান দেখা যায়। কৃষ্ণেন্দু গভীর বিমর্ষ হয়ে পথ চলছিল, বড় একটা নিমগাছের কাছে দাড়িয়ে খনিকক্ষণ সে একপাল হনুমানের লীলাখেলা চেয়ে দেখল। তিনটি হনুমতী উকুন বেছে বেছে পালের গোদার অঙ্গসেবা করছে। সে দুই হাঁটুতে হাত রেখে আরামে চোখ বুজে বসে আছে। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই কি অপরাধে একটি সেবিকাকে সে সজোরে চড় বসিয়ে দিল । লাফিয়ে তফাতে সরে খানিকক্ষণ কিচির মিচির করে সেবিকাটি যেন অভিমান করেই গোদার দিকে পিছন করে বসল এবং সন্তানকে বুকে নিয়ে অবিকল মানুষের ভঙ্গিতে স্তন দিতে লাগিল । হীরেন বলল, “আমার খিদে পেয়েছে।” কৃষ্ণেন্দু চলতে আরম্ভ করে বলল, “লিভারের যা অবস্থা দাড়িয়েছে, খিদে তোর কখনো পায় না । মনটা খারাপ হয়ে গেল ভাই । হেরম্বকে ওরা এত ভয় করে কেন বুঝতে পারলাম না। আমাকে দেখে ওরাও কেমন হতাশ হয়ে গেছে মনে হল শেষের দিকে ৷” ‘আগাগোড়া শুধু ছ্যাবলামি করলি, ওদের দোষ কি ? হেরম্বকে কেন এত ভয় করে সেটা তো ওদের কথাবার্তা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল।’ S-\)