পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী সে কথা চিন্ময়কে বলিয়া লাভ নাই। সে বুঝিবে না। বড় মাছ ছিপে গাথিয়া ধরার সুখ আর বড় মাছ রান্না করিয়া খাওয়ার সুখের পার্থক্য তার জানা নাই । মাছ ধরার সুখের স্বাদটা তার জানা আছে কিন্তু সুখটা পাওয়ার আগ্ৰহ আছে কি ? জেলেদের পুকুরটা জমা দিলেও ছিপ ফেলিবার অধিকার সে হারায় নাই। কিন্তু গত কয়েক বছরে কতবার সে পুকুরে ছিপ ফেলিতে গিয়াছে ? একেবারেই তাগিদ অনুভব করে নাই । মোহন জিজ্ঞাসা করে, “শীতকালে খালি মেঝেতে বসে কি করে ? চিন্ময় হঠাৎ জবাব দেয় না । মোহন বুঝিতে পারে হঠাৎ সে ভয়ানক রাগিয়া গিয়াছে—মুখ বন্ধ করিয়া সে রাগটা সংযত করিবার চেষ্টা করিতেছে। চিন্ময় মুখ খুলিলে তবে মোহন তার রাগের কারণটা বুঝিতে পারে। তার প্রশ্নটাকে ব্যঙ্গ মনে করিয়া চিন্ময়ের রাগ হইয়াছে। রাগ আয়ত্তে আসিলে চিন্ময় ধীরে ধীরে বলে, “হাসি পেলে হেসে মোহন । এর চেয়ে তাতে কম ঘা লাগবে মনে । তুমি পনেরো সের মাছ তুলেছিলে মনে আছে কিন্তু আমি জীবনে কখনো ছিপে মাছ ধরিনি। আট দশ সেরি মাছ তুমি হেসে খেলে তুলে থাকে।” ছিপে মাছ ধরার প্রসঙ্গ চাপা দিবার জন্য মোহন সত্যই শীতকালে খালি মেঝেতে বসার সমস্যাটা টানিয়া আনিয়াছিল । সে লজ্জিতভাবে বলে, “মনে মনে হাসিনি ভাই, কথাটা শুধু চাপা দিচ্ছিলাম। ছিপে মাছ ধরতে তুমি যে আনাড়ি, সেটা তুমিও জানো, আমিও জানি। মুখে বলে কি হবে ? সন্ধ্যার সময় চাকর ঘরে আলো দিয়া গেল,—বড় একটি মাটির প্রদীপ। শূন্য প্রদীপের শিখাকে কঁাপিতে দেখিয়া তখন মোহনের মনে হইল সহর সত্যই দূরে সরিয়া গিয়াছে। কিন্তু গ্ৰাম কাছে আসে নাই । লোকালয়ের বাহিরে গৃহহীন তরুহীন প্ৰান্তরে শুধু একটি আলো সম্বল করিয়া R * 8