পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা ‘পাশের কামরায় উঠছি। পরের স্টেশনে আসব।' মা ও দাদার সামনে অনেকক্ষণ সে সিগারেট টানিতে পারে নাই। নতুন সিগারেট খাইতে শিখিয়াছে, নেশা বড় প্ৰবল ৷ কলিকাতায় একেবারে বাড়ীতে পৌছানোর আগে নিজনে সিগারেট টান দেওয়ার সুযোগ জুটিবে না, ভাবিয়া সে মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে। সে যে সিগারেটে খায় কেউ জানে না, হঠাৎ পাশের কামরায় যাওয়ার কারণটা কেউ অনুমান করিতে পরিবে না । পাগলামি মনে করিয়া বড় জোর একটু বিরক্ত হইবে। মোহন জোরে ধমক দিয়া বলিল, “উঠে আয় নগেন, শীগগির আয়। গাড়ী छ्ऎव् ।।' নগেন মুখ ভার করিয়া উঠিয়া আসিল । “সিগারেট খাবি তো ? এখানে বসে খা । খাচ্ছিস যখন, এত লুকোচুরি কিসের ? নগেন বিবর্ণমুখে বসিয়া থাকে। মোহন পকেট হইতে সিগারেট কেস বাহির করিয়া একটু ইতস্ততঃ করে, তারপর নিজে একটা সিগারেট ধরাইয়া কেসটি। আবার পকেটে রাখিয়া দেয় । কলেজে ঢুকিয়াই এত অল্প বয়সে সিগারেট খাইতে শেখ নগেনের উচিত ভয় নাই, তবে শিখিয়াছে। যখন চোরের মত ভয়ে ভয়ে আডালে না খাইয়া সামনেই খাক । নিজেই তাকে একটা সিগারেট দিয়া মোহন তার লজাভয় ভাঙ্গিয়া দিবে ভাবিয়াছিল । দেওয়ার সময় হাত আগাইল না । শুধু তাই নয়, মার সামনে নিজেও সে আজ পৰ্যন্ত কোনদিন সিগারেট টানে নাই, নিজেরও তার এখন দারুণ অস্বস্তি বোধ হইতে থাকে। সামনে ধূমপান করিলে গুরুজনের অমর্যাদা হয়, এ শুধু অর্থহীন গেয়ে সংস্কার, তবু মা’র দিকে খানিকটা পিছন ফিরিয়া না বসিয়া সে পারে না, কয়েকবার টান দিয়াই সিগারেটটা বাহিরে ফেলিয়া দেয়। নিজেকে এই বলিয়া বুঝায় যে, মা তো এখনো তার যুক্তিতর্কের খোজ রাখে না, মা হয়তো মনে করিবে ছেলে তাকে অবজ্ঞা করিতেছে। মিছামিছি মার মনে কষ্ট দিয়া লাভ কি ? কথাটা আগে মাকে পরিষ্কার করিয়া বুঝাইয়া দিয়া তারপর সামনে যত খুশী চুরুট সিগারেট টানিলেই হইবে। ՀԵԳ