পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা আলোচনা তাদের এবার অন্য দিকে গড়াইত অথবা আপনা হইতে থামিয়া যাইত বলা যায় না, একটা বাধা পড়িল। হাত কাটা ফস। সার্ট গায়ে নতুন বাড়ীর নতুন চাকর জ্যোতি খবর দিল, মা ডাকিতেছেন। মা ঠিক দরজার আড়ালেই ছিলেন, উৎসুক উত্তেজিত মা। ‘উনি কে ?” মারা ভাব দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়া মোহন বলিল, “উনি আমাদের বাড়ীওয়ালা জগৎবাবু।” “জগৎ কি ?” “জগদানন্দ ভটচাজ বোধ হয় ।” ‘জিজ্ঞেস করে আয় তো উনি শ্ৰীশ্ৰীপবমানন্দ ঠাকুরের ভাই নাকি ?” জিজ্ঞাসা করিয়া মোহনকে আর জবাবট মাকে বলিয়া আসিতে হইল না, জগদানন্দ তার প্রশ্নের জবাব দেওয়া মাত্র মা নিজেই ঘরের মধ্যে আসিলেন । গলায় আচল দিয়া পায়ের জুতায় মাথা ঠেকাইয়া প্ৰণাম করিলেন, জুতার ঠিক উপরে পায়ে আঙ্গুল বুলাইয়া পায়ের ধূলা মাথায় দিলেন, জিভে ঠেকাইলেন। “আপনার দাদা আমাদের গুরুদেব ছিলেন ।” জগদানন্দ বিব্রতভাবে বলিল, “তা হবে, তা হবে। আমাকে আবার প্রণাম করা কেন ।” মারি মুখের ভাব দেখিয়া মোহন বুঝিতে পারিল মা ভাবিতেছেন, একি আশ্চৰ্য্য ব্যাপার, বয়সে তিনি বড় বলিয়া গুৰুদেবের ভাই তার প্রণাম গ্ৰহণ করিতে সঙ্কোচ বোধ করিতেছেন । “আপনাদের বংশের ছোট ছেলেটিও আমার নমস্য। আপনাদের পায়ের ধূলো ছাড়া তো আমাদের গতি নেই। অনেক জন্মের পুণ্য ছিল, না ডাকতে নিজে বাড়ীতে পা দিয়েছেন। এ বেলা আপনাকে খেয়ে যেতে হবে, আমি প্ৰসাদ পাব।” “এ বেলা ? এ বেলা তো হয় না। খাওয়ার জন্য কি, কাছেই তো আছি, আরেকদিন খেয়ে যাব।” “তবে দু'টি ফল কেটে আনি ? মোহন স্তব্ধ হইয়া শুনিতেছিল। তার মা গুরুদেবের ভাইকে প্ৰণাম করিতেছে, পুণ্যের জন্য পাতের প্রসাদ ভিক্ষা করিতেছে। ভাগ্যে আজ চিন্ময় আসে নাই, এসব দেখিয়া শুনিয়া না জানি সে কি ভাবিত। RSS)