পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রোমান্স কোথা পেলি লো, কী জবাব দেব শুনি ? বলব নাকি, কুড়িয়ে পেইছি গো, ঘাটের পথে কুড়িয়ে পেইছি? তার চেয়ে এক কাজ করন ? শিরীষতলায় মশার কামড় খেয়ে তোমারও কাজ নেই, শাড়ি গয়ন। পরে বেড়ালে কেউ যে শুধোবে তাতেও মোর কােজ নেই—এমনি কিছু করা ? সুবলের মুখখানা লম্বাটে হয়ে গেল।-—“তা জানি, তোর শুধু গয়না শাড়িতে মন ।” “ন গো না, গয়না শাড়ি আমি চাইনে । আমার মনটি তোমার।’ “তই যদি হত সুখী—” ‘হত মানে ? তুমি ভাবো গয়নার লোভে তোমায় মন দিইছি। কত গয়না দেবে তুমি ? ক’ত মুরোদ তোমার ? কলকাতায় নিয়ে সেজবাবু সোনায় মুড়ে রানী সাজিয়ে রাখতে চেয়েছিল, তা গিাইছি। আমি ? আমি বলি-না, যাকে মন দিইছি তাব সাথেই চুলোয় যাব, চুলোয় যদি যাই।” ‘ ’ “বিশ্বোস হয় না, না ? বেশ তো, চল না এখুনি যাই। এক কাপড়ে এখুনি গিয়ে গাড়ি ধরি তিনটের। তুমি ও ফকির, আমিও ফকির।’ পাতার ফাক দিয়ে সুবিলের সর্বাঙ্গে চাকাচাক আলো আঁকা হয়ে গেছে । ভিজে গামছা দিয়ে সুখময়ী তার মুখ আর ঘাড়ের ঘাম সযত্নে মুছে দিল । কিন্তু সুবল খুশি হয়েছে মনে হল না, সুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এরকম ছোটখাট আদর পাওয়ার বিশেষ দাম যেন নেই, পুরানো হয়ে গেছে। ‘অমন যার মন হয়। সে একবারটি শিরীষতলায় আসে । • কাল নিয়ে চারবার ঠাকালে আমায় ।” ‘ওগো মাগো, ঠিকালাম ! আমি তোমায় ঠিকালাম ! ভেস্তে গেল তো কী করব আমি ? * হাত-পা বাধা মেয়েলোক বই তো নাই ! ঘরের বৌ, পরের দাসী, কী খ্যামিতা মোর আছে বলে ? তোমায় ঠকােব, তোমার জন্যে মরণ হয়েছে আমার ? কিছু ভালো লাগে না সুবলবাবু, একদণ্ড ঘরে মন বসে না। মাইরি বলছি, কালীর দিব্যি। মন করে কি, দূর ছাই, ঘর-সংসার ফেলে তোমার সঙ্গে পালিয়ে যাই।” বড় একটা ফাক দিয়ে এক ঝলক রোদ সুখময়ীর মুখ ঘোষে কঁধ ছয়ে মাটিতে পড়েছে। আবেগ আর উত্তেজনায় এতক্ষণে যেন চোখ দুটি তার 9 SV