পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী দেখা গেল এ খবরটা সকলেই জানে। সেন সাহেব সদরে ফিরবার পথে দয়া করে তঁর গাড়ী থামিয়ে জানিয়ে দিয়ে গেছেন যে বাস বিগড়ে গেছে, আসতে দেরি হবে। কি রকম বিগড়ানো বিগড়েছে বাস ? ক’ত দেরি হওয়া সম্ভব বাসের আসতে ? এসব খবর সেন সাহেব দেন নি। ' খুটিনাটি বিবরণের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবকে পীড়ন করার ভরসা ও অনেকের ছিল না । কেবল ডাক্তার দণ্ডধারী আর গজেন সাহস করে দুজনে প্রায় এক সঙ্গেই এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতে গিয়েছিল। দণ্ডধারী আরম্ভ করেছিল, ‘সার--” গজেন আরম্ভ করেছিল, “হুজুর-” তখন হুস • করে বেরিয়ে গিয়েছিল সেন সাহেবের গান্ডী । শ্ৰীধন যদি তখন এখনকার মতো মরিয়া হয়ে থাকতো, সে হয়তো সেন সাহেবের কাছ থেকে বাস সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ আদায় করে ছাড়ত। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবকে ঘটাতে শ্ৰীধনও কম বিমুখ নয়। তবে, স্বার্থ মানুষকে শক্ত করে, বিপদ সাহস যোগায়। তাছাড়া গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে সেলাম করে বাস সম্পর্কে একটু বিশদ বিবরণ জানতে চাইলে তার উপর দিয়ে মিঃ সেন গাড়ি চালিয়ে দিতে পারতেন না । সে দিনকাল যে আর নেই, শ্ৰীধনের পর্যন্ত তাতে বিশ্বাস জন্মেছে। বাস কখন আসবে কেউ বলতে পারে না। তবে শেষ পর্যন্ত এসে যে পৌছলে তাতে অনেকেরই সন্দেহ নেই। সেন সাহেব স্পষ্টই বলে গেছেন বাস আসবে-দোরি করে আসবে। বাস কি না। এসে পারে ? কুমড়ে বিক্রীর আগ্রহে গোবর্ধনেরও মনে হল, বাস আসবে। বাড়ী গিয়ে কুমড়োটা এনে রাখা ভালো । কখন বাস এসে পড়বে কে জানে। গরু মহিষ তার তখন ঘরে চলে গেছে। গোবধান তাড়াতাড়ি বড় রাস্তা ছেড়ে গায়ে যাবার সরু মাটির পথে নেমে গেল। গায়ের কোনো ঘরেই এখনো আলো জলেনি। কয়েক মুহুর্তের জন্য যে সন্ধ্যাদীপ জেলে জলে উঠতে বেশি দেরি নেই, দিনের আলো স্নান হয়ে এসেছে। প্ৰতিদিনের মতো শ্ৰীমন্তসহায় পুরানো মন্দিরের সিঁড়িতে এসে বসেছে। প্ৰাচীন বিষ্ণু মন্দির, এদিকে এরকম বহু মন্দির দেখা যায়। খড়পার মন্দিরের পাথরে ফাটল ধরে আজ পর্যন্ত একটিও আগাছ গজায় নি। পঞ্চাশ ষাট বছর আগে কোথা থেকে এক সন্ন্যাসিনী এসে বিষ্ণুহীন মন্দিরে কুণ্ডেশ্বরীর প্রতিষ্ঠা করে 8 brie