পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ‘আর ভাবনা নেই দিদি, শীগগিরই একটা বাড়ি ভাড়া করে তোকে আনাচ্ছি। ঘর সংসারের সব কাজ কিন্তু তোকে করতে হবে। তোর দাদা—গরীব মানুষ, ঝি চাকর রাখতে পারবে না। বুঝলি ? তবে তুই যদি খুব জোর বায়না নিস, উঠতে বসতে দিনের মধ্যে পঞ্চাশ বার ‘বৌদি চাই’ বৌদি চাই।” আব্দার করিস তাহলে দেখে শুনে খুব খাটতে পারে এমন একটা বৌদি তোকে এনে দিতে ब्राची अछि । আচ্ছা, তোর বৌদি। যদি ধর বিধবাই হয়—” অর্থাৎ নন্দ লিখতে চায় যে সে যদি একটি বিধবা মেয়েকে বিবাহ করে, তাহাকে বৌদি হিসাবে পাওয়া বিষয়ে সীতার মতামত কি, বাক্য যোজনার দোষে জিজ্ঞাসাটা নিজের মৃত্যু বিষয়ক হইয়া উঠিয়াছে দেখিয়া সে আর লেখে না ; হাসিয়া চিঠিখানা ছিড়িয়া ফেলিয়া দেয়। অবশেষে একদিন অলকা মরিয়া গেল । রাত্রি তখন ন’টা । মরণকে যে কোন সংসারে এমন বিনা আড়ম্বরে স্বীকার করিয়া লওয়া যাইতে পারে সুমতির সে অভিজ্ঞতা ছিল না । শোকের কলরব নাই, বেদনার বাহুল্য নাই, ঘরের আবহাওয়া শুধু অতি মাত্রায় স্তব্ধ হইয়া গিয়াছে। মনে হয় এবাড়ীর কত্রী যেন আজ মহাপ্ৰস্থান করে নাই, সুদীর্ঘ কালের জন্য ঘুমাইয়া পড়িয়াছে মাত্র। ঘুম ভাঙ্গিবার পরেই সকলের এই নীরবতা, অন্য কোন কারণে নয়। বার কয়েক উঃ আঃ করিয়া দাস দাসী শোকপ্ৰকাশের অন্ত করিয়াছে। অক্ষয় গম্ভীর মুখে তাহার আরাম কেদারার দুই বাহুতে কনুই ন্যস্ত করিয়া বসিয়া আছে। কয়েকবার অশ্রু মার্জনা করিতে সুমতির নিজের চোখের জল ও গিয়াছে ফুরাইয়া। নন্দ কোথায় যেন গিয়াছিল, ফিরিয়া আসিয়া শুল্কমুখে এক পাশে দাড়াইয়া আছে। খাটের উপর চাদর ঢাকা অলকার মৃতদেহ । নীচে ঝির কাছে খোকা কঁদিতেছিল, সুমতির মনে হইতেছিল, খোকার কান্নার শব্দটুকু শুধু ভিতরে নিয়া সে কানে ছিপি আঁটিয়া দিয়াছে, ঘরের অস্বাভাবিক স্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া কেহ যদি মড়া কান্নাও কঁদিয়া ওঠে সে শুনিতে अश्वि ना । 壹 কিন্তু মড়া কান্না কঁদিবে কে ? সে ? সে আর সবই পারে, নিজের কান্নায় শব্দ যোজনা করিতে পারে না । নন্দর কথা ছাড়িয়া দেওয়াই ভাল। মুখখানা (br