পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মের ইতিহাস ছোটবাড়ী, অন্দরের গা ঘোষা বৈঠকখানা । ভিতরের দিকে দরজায় একটি মুখ উকি দিতেছিল, মৃন্ময়ীকে চাহিতে দেখিয়া চাপা গলায় বলিল, “বিকুন্দা বাড়ী আছে ? মৃন্ময়ী তীব্ৰকণ্ঠে বলিল” “যান, যান। আপনি। চাষ।” এতক্ষণ অবধি ছাদের রোদের মধ্যে দাড়াইয়া মুখে কালিমার ছাপ পড়িয়া ছিল, আরও একটু কালো হইয়া মুখখান সরিয়া গেল। মৃন্ময়ী ধীরে ধীরে উঠিয়া দোতলায় গেল,-কপালে সিঁদুর পরিতে সিঁদুরের ফোটার অভাবে তাহার কপাল সুর সুর করিতেছিল। কপালই বটে। সাদা হাড়ের উপরে খানিকটা টান করা সাদা চামড়া ছাড়া আর কিছুই নয়। সি দুরের টিপ পরিয়া মুন্ময়ী আয়নায় মুখ দেখিল । মনে হইল কপালটা তাহার এমনি সাদা যে লাল সিঁদুরের চেয়ে কালে কাজলের ফোটা হইলেই যেন মানাইত ভাল । স্কুল হইতে ফিরিয়া বাড়ীতে পা দেওয়া মাত্ৰ পাচু টের পাইল বাড়ীর আবহাওয়া ভয়ঙ্কর ভাবে বদলাইয়া গিয়াছে। বারান্দায় ষ্টেভ জবলে নাই, বৈকালিক জলযোগের কোন আয়োজন দেখা যায় না। একটা চাপা চাঞ্চল্য যেন চারিদিকে জমাট বাধিয়া আছে, প্ৰাইজ বিতরণের দিনে স্কুলে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব আসিবার আগে যেমন হয়, তেমনি । পশ্চিমের ছোট অন্ধকার ঘরখানা ইতিপূর্বে একদিন পরিষ্কার করা হইয়াছিল, এই অবেলায় দিদিমা আবার সে ঘরের মেঝে পুছিতেছেন, দিদিমার মুখের ভাব অন্ধকার ঘরখানার মতই সন্দেহ-জনক । বড় মাসীর মুখের রুক্ষত যেন বাড়িয়াছে, ছোটমাসী বসিয়া আছে মামীর শিয়রে । কি শিথিল অবসন্ন মামীমার পা গুটিাইয়া শুইবার ভঙ্গি। কাহাকেও প্রশ্ন করিবার প্রয়োজন হইল না, পাচু মুহূৰ্তমধ্যে সব বুঝিতে পারিল। বইখাতী হাতে বিম্বফারিত চোখে সে সুলতার দিকে চাহিয়া রহিল। উত্তেজনায় তাহার ছোট বুকখানির মধ্যে টিপ টপ করিতেছিল। ঘরে সে ঢুকিতে পারিল না। চৌকাঠ ডিঙ্গাইবার ক্ষমতা সে আজ হারাইয়া ফেলিয়াছে। সুধা বলিল, “কি রে পাচু ?” পাচু সলজ্জ হাসিয়া সরিয়া গেল। বারান্দার মাঝখানে দাড়াইয়া সে ভাবিয়া পাইল না কোন দিকে যাইবে, এ বাড়ীর কোন ঘরে আজ তাহার কি প্রয়োজন। মার জন্য পাচুর আজ সহসা বড় কষ্ট হইতে লাগিল, তাহার দুই চােখ জলে Gdr