পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী ভরিয়া গেল। তাহার মা থাকিলে মামীম তাহাকে এমনভাবে শান্তি দিতে পারিত না। ’ দাইএর কাছে খবর গিয়াছিল, একটা কাপড়ের পুটলি হাতে পান চিবাইতে চিবাইতে সে আসিয়া দাড়াইল । পরণের মোটা কাপড়খানা তাহার। যেমন নোংরা। তেমনি দুৰ্গন্ধ। তা, কাজটাও তাহার অতিশয় নোংরা বৈকি। হাতে মুখে সে অনেকগুলি উল্কির ছবি অ্যাকাইয়াছে, গায়ের রঙ এত কালে যে আর একটু কালো হইলে গায়ের উল্কিগুলি দেখা যাইত কিনা সন্দেহ। কোনদিকে দৃকপাত নাই, স্বয়ং বিধাতার স্মৃষ্টিকাৰ্যে সহায়তা করিতে করিতে তাহার প্রচুর আত্মপ্ৰত্যয় জন্মিয়াছে। আসিয়াই হাকিল, “গিন্নিম कूथांश ८|?' মা উপর হইতে নামিয়া আসিলেন । দাই বলিল, “এসলাম তো গিন্নিম, উদিকে যে আবার ফ্যাকড়া বঁধিল ।” মা শঙ্কিত হইয়া বলিলেন, “কি আবার ফ্যাকড়া বঁধিল বাছা ?” ‘হোঁই ও পাড়ার ভূষণবাবুর মেয়েরও আজ ব্যথা উঠেছে। আমার হাত ধরে কি টানাটানিই না করলে!-দত্তমশায় নিজে, লজ্জায় মারি গিন্নিমা ! বললে, তুমি থাকলে বুকে ভরসা পাই রাখীর মা, ভ্যালয় ভালয় খালাস করে দাও, পচিশ টাকা নগদ আর তোমার যা রোজ বাধা আছে দু’টাকা করে-' একটু নিরুপায় হাসি হাসিয়া দ্বিধাগ্ৰস্তভাবে দাই মার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। মা মুখ ভার করিয়া বলিলেন, “ওইতো বাছা তোমাদের দোষ । একেবারে শেষ সময়ে মোচড় দিয়ে পাওনা বাড়িয়ে নিতে চাও । দেন পাওনার কথা তোমার সঙ্গে তো হয়েই আছে কবে থেকে ?” দাই বলিল, “কথা হয়ে থাকলেই কি গরীবের চলে মা ! যেখানে দুটাকা বেশী মিলবে আমাদের সেইখানেই নাগতে হবে।” মার সাংসারিক অভিজ্ঞতা কম নয়, বলিলেন, “তবে তুমি সেইখানেই যাও বাপু, আমরা অন্য লোক দেখছি। সিধুর বোনকে বলা আছে, ডাকলেই আসবে।” শুনিয়া ঘরে সুলতার মাথার মধ্যে ঝিম ঝিম করিয়া উঠিল। এমন বিপৰ্যয় ব্যাপার ঘটবে, বংশধর ভূমিষ্ঠ হইবে, ছেলের বৌ বাচিবে কি মরিবে ঠিক নাই, শ্বাশুড়ী তুচ্ছ কাটা টাকার জন্য এমন করিতেছেন!! যে টাকা তারই স্বামী মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া রোজগার করে !! প্ৰথমেই পাওনা নিয়ে গোল বাধিলে দাই কি