পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8br মানিক রচনাসমগ্র সাথি করিয়া নিরুদ্দেশ হইয়াছিল,--শ্যামার বিবাহ হইয়াছে আজ একুশ বাইশ বছর। বিবাহের সাত বছর পরে তাব সেই প্রথম ছেলেটি হইয়া মাবা যায়, তার দুবছর পবে বিধানের জন্ম। গত আশ্বিনে বিধানের এগারো বছর বয়স পূর্ণ হইয়াছে। মামার বয়স ষাট হইয়াছে বইকী! কিন্তু যে লোহার মতো শরীর তাহাব ছিল, এতটা বয়সের ছাপা পডে নাই, শুধু চুলগুলি পাকি।যা গিয়াছে, দুটাে একটা দাঁত বোধ হয় পড়িয়া গিয়াছিল মামা সোনা দিয়া বাধাইয়া লইয়াছে, কথা বলিবার সময, ঝিকমিক করে। এখনও সে আগেবা মতোই সোজা হইয়া দাঁড়ায়, মেরুদণ্ডটা আজও এতটুকু বঁাকে নাই। চোখ দুটা মনে হয় একটু স্তিমিত হইয়া আসিয়াছে, তা সে চোখের দোষ অথবা মানসিক শ্রান্তি বুঝা যায় না। শ্যামার বিবাহের সময় মামা ছিল সন্ন্যাসী, গেরুয়া পরিত, লম্বা আলখাল্লা বুলাইয়া সযত্নে বাবরি। আচডাইয়া ক্যাম্বিশের জুতা পায়ে দিয়া যখন গ্রামের পথে বেড়াইতে যাইত, মনে হইত মস্ত সাধু, বড়ো ভক্তি করিত গ্রামের লোক । এবার মামার পরনে সরু। কালোপাড় ধুতি, গায়ে পাঞ্জাবি, পায়ে চকচকে জুতো, –একেবারে বাবুর বাবু। শীতল চিনিতে পারে নাই। শ্যামা প্ৰণাম করি যা বলিল, ও মাগো, কোথায যাব, এ যে মামা । কোথা থেকে এলে মামা তুমি ? মামা হাসিযা বলিল, এক জায়গা থেকে কী আর এসেছি মা যে নাম করব, চরকিবাজিব মতো ঘুরতে ঘুরতে একবার তোকে দেখতে এলাম, আপনার জন কেউ তো আব্ব নেই, বুড়ো হযেছি কোনদিন চোখ বুজি তাব আগে ভাগনিটাকে একবাব দেখে যাই, এই সব ভাবলাম আর কী---এবা তোব ছেলেমেয়ে না ? কটি রে ? শ্যামাকে মামা বডো ভালোবাসিত, সে তো জানিত মামা কবে কোন বিদেশে দেহ রাখিযাছে, এতকাল পাবে মামাকে পাইয়া শ্যামার আনন্দের সীমা রহিল না। কী দিয়া সে যে মামাব অভ্যর্থনা করিবে! বাইশ বছর পরে যে আত্মীয় ফিরিয়া আসে তাকে কী বুলিতে হয়, কী কবিতে হয় তাব জন্য ? মামাকে সে নানারকম খাবার করিয়া দিল, বাজার হইতে ভালো মাছ তরকাবি আনিয়া রান্না কবিল, বেশি দুধ আনাইয়া তৈরি করিলা পায়েস। মামা বড়ো ভালোবাসিত পায়েস। এখনও তেমনই ভালোবাসে কিনা কে জানে ? মামার সঙ্গে একটু ভদ্রতা করিয়া শীতল কোথায় পলাইয়াছিল, মামা ইতিমধ্যে শ্যামার ছেলেদেব সঙ্গে ভাবি জমাই যা ফেলিয়াছে।--ভারা মজার লোক, এমন আর শ্যামার ছেলেবা দাখে নাই। রধিতে বঁধিতে শ্যামা হাসিমুখে কাছে ‘আসিয়া দাঁড়ায়, বলে, আর তোমাকে পালিয়ে যেতে দেব না। মামা, এবার থেকে আমার কাছে থাকবে। তোমার জিনিসপত্তর কই ? মামা বলে, সে এক হােটেলে রেখে এসেছি, কে জানত বাবু তোরা আছিস এখানে ? শ্যামা বলে, ও বেলা গিয়ে তবে জিনিসপত্তর সব নিয়ে এসো,--- কলকাতা এসেছ কবে ? মামা বলে, এই তো এলাম কাল না পরশু,--পবশ্ব বিকেলে। বিধান আজ স্কুলে গেল না। মামা আসিয়াছে বলিয়া শুধু নয়, বাডিতে আজ নানারকম রান্না হইতেছে, মামা কী একাই সব খাইবে? এগারোটা পর্যন্ত কোথায় আডডা দিয়া আসিয়া তাড়াহুড়া করিয়া স্নানাহার সারিয়া শীতল প্রেসে চলিয়া গেল, মামার সঙ্গে একদণ্ড বসিয়া কথা বলারও সময পাইল না। আজ তাহার এত তাড়াতাড়ি কীসের সেই জানে, বাড়িতে একটা মানুষ আসিলে শীতল যেন কী রকম করে, সে যেন চোর-পুলিশ তাহার খোঁজ করিতে আসিয়াছে। রধিতে রাধিতে শ্যামা কত কী যে ভাবিতে লাগিল। মামার সঙ্গিনীটির কী হইয়াছে? হয়তো মরিয়া গিয়াছে, নয়তো মামার সঙ্গে ছাড়াছড়ি হইয়াছে অনেকদিন আগেই। ও সব সম্পর্ক আর কতকাল টেকে? মরুক, ও সব দিয়া তার কী দরকার? কেলেঙ্কারি ব্যাপার চুকাইয়া দিয়া মামা ফিরিয়া আসিয়াছে