পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা

আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে মেনে নিয়ে ভারতবর্ষকে ষোল টুকরো করা উচিত। এই ঘটনা এটাও প্রমাণ করে যে, অন্ধের মত কোনো বিদেশী তত্ত্বকে ভারতে প্রয়োগ করার ফল কত মারাত্মক ও বিপজ্জনক হতে পারে। পাকিস্তান সৃষ্টিতে মার্কসবাদীদের সমর্থন এই বিপজ্জনক পরিণতিরই সাক্ষ্য বহন করছে।

 শ্রীঅরবিন্দের অসীম প্রজ্ঞা ও গভীর অনুভূতি যে সত্য উচ্চারণ করেছিল, সেই সত্য ক্রমশই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। হিন্দুত্বই যে ভারতীয়ত্ব বা ভারতের জাতীয়তাবাদ তা নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে আজ চরম সত্য বলে প্রতিভাত হচ্ছে। ভারতের যে অংশে হিন্দুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে সেখানেই বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে। হিন্দুর সংখ্যা কমে যাবার ফলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ভারত থেকে পৃথক হয়ে পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নাগাল্যাণ্ড, মিজোরাম, মেঘালয় ইত্যাদি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে হিন্দুর সংখ্যা কমে গিয়ে খ্রীষ্টানদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখানেও বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবি উঠছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ বেড়ে চলেছে। তাই এটাও দিনের আলোর মত পরিষ্কার হচ্ছে যে, হিন্দুত্বের প্রসার ভিন্ন আর কোনো মতেই ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব নয়।


ধর্ম শব্দের তাৎপর্য:

 গীতা বলছে, “প্রকৃত তত্ত্ব না বুঝিয়া, ‘ইহাই যাহা কিছু সমস্ত’ এইরূপ কোন একটি খণ্ডিত বিষয়ে আসক্ত থাকাকে, সেই যুক্তি-বিরুদ্ধ, অ-যথার্থ ও তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে।” (১৮/২২)। কাজেই গীতা অনুসারে ধর্ম সম্বন্ধে আমাদের মার্কসবাদীদের জ্ঞান অ-যথার্থ ও তামসিক। ধর্ম শব্দের প্রকৃত তাৎপর্য না বুঝে তাঁরা একে বিলাতী রিলিজিয়ন শব্দে সমার্থক ধরে নিয়েছেন এবং তাদের এই জ্ঞানকেই সম্পূর্ণ ভাবছেন॥ ছাড়া আর কিছু জানার বা বোঝার নেই। কাজেই হিন্দুধর্মও পাশ্চাত্যের খ্রীষ্টধর্ম বা আরবের ইসলামের মতই একটা রিলিজিয়ন মাত্র। তাই গীতানুসারে তাদের এই জ্ঞানও অ-যথার্থ ও তামসিক জ্ঞান। সব থেকে বড় কথা হল, তাদের এই ভুল ভাবনার জন্য সত্য পরিবর্তিত হবে না, ধর্ম আর রিলিজিয়ন সমান হয়ে যাবে না। এবং হিন্দুধর্ম বা সনাতন ধর্ম খ্রীষ্ট মত বা ইসলামের সঙ্গে সমান হয়ে যাবে না। পক্ষান্তরে এই ভুল ধারণা বশত মার্কসবাদীরা যে ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে তাদের শ্মশানযাত্রার পথই প্রশস্ত হচ্ছে এবং হবে।

 ভারতীয় চিন্তাধারা অনুযায়ী প্রতিটি মানুষ শরীর, মন, বুদ্ধি ও আত্মার সমষ্টি, কিন্তু এগুলি একাত্মীভূত এবং একটিকে পৃথক করে চিন্তা করা যায় না। কাজেই মানুষের জীবন প্রণালী ও সমাজ ব্যবস্থাও এমন হওয়া উচিত যাতে এই চারটিরই পুরিপুষ্টি ঘটে, সন্তুষ্টি ঘটে এবং উন্নতি সাধিত হয়। এগুলি বিকশিত হলেই মানুষ পূর্ণরূপে বিকশিত হয়। তাই ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চারটি পুরুষার্থের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষ প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিজীবন নির্ধারিত করে দিয়েছে যাতে শরীর, মন, বুদ্ধি ও আত্মার পরিপুষ্টি ঘটতে পারে। পুরুষার্থ হল মানবীয় প্রয়াস বা প্রচেষ্টা। এখানে লক্ষণীয় হল এই যে, মার্কসবাদ মানুষের শরীর, মন ও বুদ্ধির পরিপুষ্টির ব্যবস্থা করেছে এবং আত্মা অবহেলিত হয়েছে। মার্কসবাদ অনুসারে মানুষ হল একটা বৈজ্ঞানিক যন্ত্র এবং ভাবা হয়েছিল যে, আহার, নিদ্রা, বাসস্থান আর মৈথুনের ব্যবস্থা করতে পারলেই মানুষ সুখে থাকবে। এই কারণেই মার্কসবাদকে বলা যায় একটি শিশ্নোদর তত্ত্ব এবং এতে