বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৪২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী।

এ বিষয়ে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে পারিব। জগৎশেঠ কহিলেন, ব্যবসায় সম্বন্ধে তাঁহাদের সহিত আমারও বিলক্ষণ পরিচয় হইয়াছে।[] অতএব মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রস্তাবই সঙ্গত।

 তৎপরে সকলেই একবাক্যে সেই প্রস্তাবে সম্মতিপ্রদান করিলে, ক্লাইব সাহেবকে সমস্ত বিষয় জ্ঞাপন করা হয়।[] কিন্তু ইতিহাসে এই মন্ত্রণা-সভার উল্লেখ দেখা যায় না। মন্ত্রণা-সভা হউক বা না হউক, পূর্বোক্ত ব্যক্তিগণ সিরাজের পদচ্যুতির জন্য যে যারপরনাই চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে, জগৎশেঠ আমীরচাঁদের দ্বারা সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদিগকে ক্রমাগত উত্তেজিত করিতেন।[] রুমে রুমে যখন এই সমস্ত যড়যন্ত্রের কথা নবাব কিয়ৎপরিমাণে বুঝিতে সক্ষম হন, সেই সময়ে জগৎশেঠও সতর্কতা অবলম্বন করেন। তিনি ইংরেজদের পক্ষ হইয়া নবাব-দরবারে আর কোন বিষয়ের উল্লেখ করিতে সাহসী হইতেন না। তাঁঁহারা রণজিৎ রায় নামে আপনাদিগের একজন প্রতিনিধি দ্বারা ইংরেজদিগের কথাবার্তা নবাব-দরবারে উপস্থিত করিতেন।[]

 ইয়ারলতিফ খা ঁনামে নবাবের একজন সৈন্যাধ্যক্ষ ছিলেন। তাহার অধীন দুই সহস্র অশ্বারোহী শেঠদিগের প্রদত্ত বৃত্তির দ্বারা রক্ষিত হইত। নবাব শেঠদিগের অনিষ্ট করিতে ইচ্ছা করিলে, ইয়ারলতিফ শেঠদিগের বৃত্তির জন্য তাঁহাদিগকে রক্ষা করিতে প্রতিশ্রুত হন। উক্ত খা ঁইংরেজদিগকে গোপনে সংবাদ দেন যে, যদি ইংরেজেরা তাহাকে নবাবী প্রদান করিতে অঙ্গীকার করেন, তাহা হইলে তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে তাহাদিগকে সাহায্য করিতে পারেন এবং তজ্জন্য শেঠেরা তাহার সাহায্য করিতে স্বীকৃত আছেন। এই সময়ে মীরজাফরও নবাবীর আশায় ইংরেজদিগকে সাহায্য করিতে ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। তিনিও জগৎশেঠ ও রায়দুর্লভের নিকট হইতে সাহায্য প্রাপ্ত হইবেন বলিয়া ইংরেজদিগকে অবগত করান। ইংরেজরা মীরজাফরের প্রস্তাবই সঙ্গত মনে করেন; কিন্তু ইয়ারলতিফকেও হস্তচু্যত করেন নাই। তাহার পর

  1. ইতিহাসে কিন্তু ইহার পূর্ব হইতে জগৎশেঠের সহিত ইংরেজদেগের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ দেখা যায়।
  2. মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রচরিত, ৪র্থ সংস্করণ, ৪৫-৫৩ পৃঃ, এবং ক্ষিতীশবংশাবলী রচিত রয়োদশ অধ্যায়।
  3. “Djagat-seat was one of the foremost of them, and he had also the best opportunities by the means of his mercantile agent Amin chund, one of the principal bankers of Calcutta, he was perpetually exciting the English to a rupture.” (Seir Mutaqherin, Vol. I, p. 793.) এই আমীনৗচাঁদই প্রচলিত ইতিহাসের উমিচাঁদ। ইহার প্রকৃত নামই আমীরচাঁদ; মুতাক্ষরীন প্রভৃতি গ্রন্থে তিনি আমীনচাঁদ বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছেন। উমিচাঁদ বাঙ্গালী নহেন, তিনি একজন পাঞ্জাবী মহাজন।
  4. Orme’s Indostan, Vol. II, p. 128.