পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৬৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

এবং কোম্পানী দেওয়ানীর ভার গ্রহণ করিলে, মহম্মদ রেজা খা ঁনায়েব দেওয়ান নিযুক্ত হন। সেই সময়ে কাননগোগণ তাহার অধীনে কার্য করিতেন। গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের ভ্রাতা রাধাকান্ত সিংহ লক্ষীনারায়ণের অধীনে নায়েব কাননগোর কার্য করিতেন; পরে গঙ্গাগোবিন্দ উক্ত পদে নিযুক্ত হন। যৎকালে মহম্মদ রেজা খাঁকে কোম্পানীর অর্থের জন্য দায়ী করিয়া কলিকাতায় বন্দী অবস্থায় লইয়া যাওয়া যায়, সেই সময়ে কিছুদিন কাননগো পদ রহিত হয়। তাহার পর ওয়ারেন হেস্টিংসের নূতন বন্দোবস্তে পুনর্বার কাননগো-বিভাগের কার্য আরম্ভ হয়। এই সময়ে কাননগোবিভাগ মুর্শিদাবাদ হইতে কলিকাতায় অন্তরিত হয়। প্রাচীন কাগজপত্রাদিতে দৃষ্ট হয় যে, তৎকালে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ লক্ষীনারায়ণের ও শ্রীনারায়ণ মুস্তফী মহেন্দ্রনারায়ণের অধীনে নায়েব কাননগোর কার্য করিতেন। গঙ্গাগোবিন্দ পরে কলিকাতার রাজস্বসমিতির দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। এবং শ্রীনারায়ণকে লক্ষীনারায়ণের অধীনে নায়েব কাননগো দেখা যায়। তৎকালে রাজা রাজবল্লভ রায়রায়ান বা খালসার দেওয়ানী পদে নিযুক্ত ছিলেন। এই কাননগো-বিভাগ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। তাহার পর লর্ড কর্নওয়ালিস তাহা রহিত করিয়া দেন। লক্ষীনারায়ণ অনেক সৎকার্য করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে তাহাদের জমিদারী রুকুনপুর, সন্দ্বীপ প্রভৃতি স্থানে বহু পরিমাণে ব্রহ্মোত্তর দিয়া যান। এইরূপ কথিত আছে যে, তিনি আপনার বিস্তৃত জমিদারীর মধ্যে ৩ লক্ষ কালীপূজার বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। অদ্যাপি অনেক স্থানে তাহা প্রচলিত আছে এবং প্রতিবৎসর কার্তিক মাসের অমাবস্যায় উক্ত পূজা হইয়া থাকে।

 লক্ষীনারায়ণ মৃত্যুসময়ে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহকে স্বীয় নাবালক পুত্র সূর্যনারায়ণের ‘তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত করিয়া যান। বঙ্গাধিকারিগণ বলিয়া থাকেন যে, গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের তত্ত্বাবধানে তাহারই স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাহাদিগের অনেক জমিদারি হস্তান্তরিত হয়। সূর্যনারায়ণের সময় হইতেই বঙ্গাধিকারিগণের দুর্দশার আরম্ভ। এই সময়ে তাহাদের কোন কার্য না থাকায় আয়ের লাঘব হয় এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময়ও তাহাদের অনেক জমিদারি হস্তান্তরিত হইয়া যায়। সূর্যনারায়ণের পর চন্দ্রনারায়ণ, তৎপরে ব্রজেন্দ্রনারায়ণ বঙ্গাধিকারিবংশে জন্মগ্রহণ করেন। এক্ষণে ব্রজেন্দ্রনারায়ণের পুত্র কুমার প্রতাপনারায়ণ এবং তাহার পুত্র দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ বঙ্গাধিকারিগণের বংশধর। বঙ্গাধিকারিগণের অবস্থা এক্ষণে অত্যন্ত শোচনীয়। তাহাদের সে বিস্তৃত জমিদারি নাই। জীবিকানির্বাহ করা একপ্রকার কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। সেইজন্য কুমার প্রতাপনারায়ণকে রুরাল সবরেজিস্ট্রারীপদ গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। যাঁহারা এককালে সমগ্র বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার রেজিস্ট্রারীপদে নিযুক্ত থাকিয়া দেশের যাবতীয় রাজা-মহারাজগণ কর্তৃক সম্মান সহকারে পূজিত হইয়া আসিয়াছিলেন, তাহাদের বংশধর কতিপয় সামান্য পল্লীর রেজিষারী কার্য করিয়া অতীব কষ্টসহকারে জীবনাতিপাত করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন! প্রতাপনারায়ণ গভর্নমেন্টের নিকট