পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

রঘুজীর নিকট লইয়া যান। রঘুজীও পুনঃ পুনঃ যুদ্ধে পরিক্লান্ত হইয়া মনে মনে সন্ধিস্থাপনে উৎসুক হইলেও মীর হাবীব তাহাতে বাধা দিয়া তাহাকে আলিবর্দীর বিরুদ্ধে বারংবার উত্তেজিত করেন। মীর হাবীবের উত্তেজনায় রঘুজী সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিয়া, মুর্শিদাবাদ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হইলেন। রঘুজীকে সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিতে দেখিয়া, নবাব ও বেগমের পরামর্শানুসারে পুনর্বার নবাবসৈন্যগণ মহারাষ্ট্রীয়দিগের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিল এবং তাহাদিগকে আক্রমণ করিয়া ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিল।

 মহারাষ্ট্রীয়গণ যেরুপ নবাব আলিবর্দী খাঁকে ব্যাকুল করিয়াছিল, সেইরূপ কতিপয় আফগান সেনানীও তাহাকে কিছুদিন অশান্তির হিল্লোলে ভাসমান করিয়া তুলে। তাহার প্রধান সেনাপতি মোস্তাফা খাঁ, সমশের খা ঁপ্রভৃতি বিদ্রোহী হইয়া বিহার প্রদেশে অত্যন্ত গোলযোগ ঘটাইয়াছিল। মোস্তাফা খা ঁপ্রথমে হত হয়। তাহার পর আফগানের কথঞ্চিৎ ভগ্নোদ্যম হইয়া কৌশলপূর্বক নবাবের রাজ্যে নানারূপ উৎপাত করিতে থাকে। আলিবর্দীর ভ্রাতুস্পুত্র ও জামাতা এবং সিরাজউদ্দৌলার পিতা জৈনুদ্দীন তৎকালে বিহারের শাসনকর্তার পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আফগানের৷ কথঞ্চিৎ শান্তভাব অবলম্বন করায়, জৈনুদ্দীন তাহাদিগকে নিজ সৈন্যগণের অন্তর্ভূত করিতে ইচ্ছা করেন। আফগানেরা তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া সমস্ত বিষয়ের বন্দোবস্ত করিতে স্বীকৃত হয়। পরে তাঁহারা দরবারগৃহে জৈনুদ্দীনের সহিত সাক্ষাতের ছলে তাহাকে সেই স্থানে নিহত করিয়া, তাহার পরিবারবর্গের যৎপরোনাস্তি লাঞ্ছনা করে। তাঁহারা জৈনুদ্দীনের স্ত্রী আমিনা বেগম ও অন্যান্য সম্ভ্রান্ত মহিলাদিগকে উন্মুক্ত শকটে আরোহণ করাইয়া, প্রকাশ্য রাজপথ দিয়া সমস্ত নগর প্রদক্ষিণ করায় এবং জৈনুদ্দীনের পিতা ও আলিবর্দীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাজী আহমদকে অশেষবিধ কষ্ট প্রদান করিয়া নিহত করে। ক্রমে সমস্ত বিহার প্রদেশ তাহাদের করতলগত হয়।

 নবাব এই সংবাদশ্রবণে হৃদয়ে এতদূর আঘাত প্রাপ্ত হন যে, আফগানদিগের দমনের কি উপায় করিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারেন নাই। তিনি নিজ প্রাণপ্রিয় জামাতা জৈনুদ্দীনের ও জ্যেঠ-ভ্রাতার তাদৃশ শোচনীয় পরিণামে অত্যন্ত ব্যথিত হইয়া পড়িলেন। স্নেহপুত্তলী কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের নির্যাতন ও অবমাননায় নবাব স্ত্রীলোকের ন্যায় কাতর হইলেন; তাহার উপর পাটনা ও সমস্ত বিহারের দুর্দশার স্মৃতি তাহাকে আরও অভিভূত করিয়া ফেলিল। সেই সময়ে তাহার সেই মহীয়সী মহিষীর উপদেশালোক পুনরায় তাহার হৃদয়াকাশ হইতে বিষাদ-মেঘ দূরীভূত করিতে আরম্ভ করিল। তিনি নবাবকে নিতান্ত নিস্তেজ ভাবে অবস্থিতি করিতে দেখিয়া, তাহাকে আফগানদিগের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিতে লাগিলেন। যাহাতে কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের উদ্ধার সাধন হয়, তজ্জন্য প্রকৃষ্ট উপায় অবলম্বন করিতে

[১]

  1. Holwell's Interesting Historical Events, Pt. I, p. 170.