পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
মৃণালিনী।

 প। “দামোদর শর্ম্মা উপদেশানুযায়ী কার্য্য করিয়াছেন কি না?”

 শা। “তিনি অতি চতুরের ন্যায় কর্ম্ম নির্ব্বাহ করিয়াছেন।”

 প। “সে কি প্রকার?”

 শা। “তিনি একখানি পুরাতন গ্রন্থের একখানি পত্র পরিবর্ত্তন করিয়া তাহাতে আপনার রচিত যবন বিষয়িণী কবিতা গুলিন ন্যস্ত করিয়াছিলেন। তাহা লইয়া অদ্য প্রাহ্নে রাজাকে শ্রবণ করাইয়াছেন। এবং মাধবাচার্য্যের অনেক নিন্দা করিযাছেন।”

 প। “কবিতায় ভবিষ্যৎ বঙ্গবিজেতার রূপ বর্ণনা সবিস্তারে লিখিত আছে। তৎসম্বন্ধে মহারাজ কোন অনুসন্ধান করিয়াছিলেন?”

 শা। “করিয়াছিলেন, মদন সেন সম্প্রতি কাশীধাম হইতে প্রত্যাগমন করিয়াছেন, এ সম্বাদ মহারাজ অবগত আছেন। মহারাজ কবিতায় ভবিষ্যৎ বঙ্গজেতার অবয়ব বর্ণনা শুনিয়া তাঁহাকে ডাকিতে পাঠাইলেন। মদন সেন উপস্থিত হইলে মহারাজ জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কেমন, তুমি মগধে যবনরাজ প্রতিনিধিকে দেখিয়া আসিয়াছ?’ সে কহিল ‘আসিয়াছি।’ মহারাজ তখন আজ্ঞা করিলেন, ‘সে দেখিতে কি প্রকার, বিবরিত কর।’ তখন মদন সেন বখ্‌তিয়ার খিলিজির যথার্থ যেরূপ দেখিয়াছেন তাহাই বিবরিত করিলেন। কবিতাতেও সেই রূপ বর্ণিত ছিল। সুতরাং বঙ্গজয় ও তাঁহার রাজ্যনাশ নিশ্চিত বলিয়া বুঝিলেন।”

 প। “তাহার পর।”

 শা। “রাজা তখন রোদন করিতে লাগিলেন, কহিলেন ‘আমি এ বৃদ্ধ বয়সে কি করিব? সপরিবারে যবনহস্তে প্রাণে নষ্ট হইব দেখিতেছি।’ তখন দামোদর শিক্ষামত কহিলেন,