পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধাতুমূর্ত্তির বিসর্জ্জন।
১৮৫

ভগ্ন―তদুপরি মৃতদেহ! এখনও কোন হতভাগ্য মরণ যন্ত্রণায় অমানুষিক কাতরস্বরে শব্দ করিতেছিল। এ সকলের মূল তিনিই। দারুণ লোভের বশবর্ত্তী হইয়া তিনি এই রাজধানীকে শ্মশানভূমি করিয়াছেন। পশুপতি মনে মনে স্বীকার করিলেন যে তিনি প্রাণদণ্ডের যোগ্য পাত্র বটে―কেন মহম্মদআলিকে কলঙ্কিত করিয়া কারাগার হইতে পলায়ন করিলেন? যবন তাঁহাকে ধৃত করুক―অভিপ্রেত শাস্তিপ্রদান করুক―মনে করিলেন, ফিরিয়া যাইবেন। মনে মনে তখন ইষ্ট দেবীকে স্মরণ করিলেন―কিন্তু কি কামনা করিবেন? কামনার বিষয় আর কিছুই নাই। আকাশ প্রতি চাহিলেন। গগনের নক্ষত্রচন্দ্রগ্রহমণ্ডলী-বিভূষিত সহাস্য পবিত্র শোভা তাঁহার চক্ষে সহিল না―তীব্র জ্যোতিসম্পীড়িতের ন্যায় চক্ষুরধঃক্ষেপণ করিলেন। সহসা অনৈসর্গিক ভয় আসিয়া তাঁহার হৃদয় আচ্ছন্ন করিল―অকারণ ভয়ে তিনি আর পদক্ষেপ করিতে পারিলেন না। সহসা বলহীন হইলেন। বিশ্রাম করিবার জন্য পথিমধ্যে উপবেশন করিতে গিয়া দেখিলেন―এক শবাসনে উপবেশন করিতেছিলেন। শবনিস্রুত রক্ত তাঁহার বসনে এবং অঙ্গে লাগিল। তিনি কণ্টকিত-কলেবরে পুনরুত্থান করিলেন। আর দাঁড়াইলেন না। দ্রুতপদে চলিলেন। সহসা আর এক কথা মনে পড়িল―তাঁহার নিজ বাটী? তাহা কি যবনহস্তে রক্ষা পাইয়াছে? আর সে বাটীতে যে কুসুমময়ী প্রাণ-পুত্তলীকে লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন, তাহার কি হইয়াছে? মনোরমার কি দশা হইয়াছে। তাঁহার প্রাণাধিকা, তাঁহাকে পাপ পথ হইতে পুনঃ পুনঃ নিবারণ করিয়াছিল, সেও বুঝি তাঁহার পাপ সাগরের তরঙ্গে ডুবিয়াছে। এ যবনসেনাপ্রবাহে সে কুসুম কলিকা না জানি কোথায় ভাসিয়া গিয়াছে!

ত৩