পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
মৃণালিনী।

 “মৃণালিনী! কি বলিয়া আমি তোমাকে পত্র লিখিব? তুমি আমার জন্যে দেশত্যাগিনী হইয়া পর গৃহে কষ্টে কালাতিপাত করিতেছ। যদি দৈবানুগ্রহে তোমার সন্ধান পাইয়াছি, তথাপি তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিলাম না। তুমি ইহাতে আমাকে অপ্রণয়ী মনে করিবে—অথবা অন্যা হইলে মনে করিত—তুমি করিবে না। আমি কোন বিশেষ ব্রতে নিযুক্ত আছি—যদি তৎপ্রতি আমি অবহেলা করি, তবে আমি কুলাঙ্গার। তৎসাধন জন্য আমি গুরুর নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছি যে, তোমার সহিত এ স্থানে সাক্ষাৎ করিব না। আমি নিশ্চিত জানি যে, আমি যে তোমার জন্য সত্য ভঙ্গ করিব, তোমারও এমত সাধ নহে। অতএব এক বৎসর কোন ক্রমে দিন যাপন কর। পরে ঈশ্বর প্রসন্ন হয়েন, তবে অচিরাৎ তোমাকে রাজপুরবধূ করিয়া আত্মসুখ সম্পূর্ণ করিব। এই অল্পবয়স্কা প্রগল‍্ভবুদ্ধি বালিকা হস্তে উত্তর প্রেরণ করিও।” মণালিনী পত্র পড়িয়া গিরিজয়াকে কহিলেন,

 “গিরিজায়ে! আমার লেখনী পত্রাদি কিছুই নাই যে লিপি প্রেরণ করি। তুমি মুখে আমার প্রত্যুত্তর লইয়া যাও। তুমি বিশ্বাসভাগিনী—পুরস্কার স্বরূপ আমার অঙ্গের অলঙ্কার দিতেছি।”

 গিরিজায়া কহিল, “প্রত্যুত্তর কাহার নিকট লইয়া যাইব। তিনি আমাকে লিপি দিয়া বিদায় করিবার সময় বলিয়া দিয়াছিলেন, যে আজি রাত্রেই তামাকে প্রত্যুত্তর আনিয়া দিও। আমিও স্বীকৃত ছিলাম। আসিবার সময় মনে করিলাম, হয়ত তোলার নিকট মসী লেখনী প্রভৃতি নাই; এ জন্য সে সকল সংগ্রহ করিয়া আনিবার জন্য তাঁহার উদ্দেশে গেলাম। তাঁহার