পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্গেশ্বর।
৫৫

কোন্ ছার? আপনার সম্মুখে আমার গ্রন্থের নাম স্মরণ হইবে না; কিন্তু কবিতাটা শ্রবণ করুন।”

 মাধ। “গৌড়েশ্বরের সভাপণ্ডিত যে অনষ্টুপ্ছন্দে একটী কবিতা রচনা করিয়া থাকিবেন, ইহা কিছুই অসম্ভব নহে। কিন্তু আমি মুক্তকণ্ঠে বলিতেছি—তুরকজাতীয় কর্তৃক বঙ্গবিজয়বিষয়িণী কথা কোন শাস্ত্রে কোথাও নাই।”

 পশুপতি কহিলেন, “আপনি কি সর্ব্বশাস্ত্রবিৎ?”

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “আপনি যদি পারেন, তবে আমাকে অশাস্ত্রজ্ঞ বলিয়া প্রতিপন্ন করুন।”

 সভাপণ্ডিতের একজন পারিষদ কহিলেন, “আমি করিব। আত্মশ্লাঘা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। যে আত্মশ্লাঘা পরবশ—সে যদি পণ্ডিত তবে মূর্খ কে?”

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “মূর্খ তিন জন। যে আত্মরক্ষায় যত্নহীন, যে সেই যত্নহীনতার প্রতিপোষক, আর যে আত্মবুদ্ধির অতীত বিষয়ে বাক্যব্যয় করে, ইহারাই মূর্খ। আপনি ত্রিবিধ মূর্খ।”

 সভাপণ্ডিতের পারিষদ্ অধোবদনে উপবেশন করিলেন।

 পশুপতি কহিলেন, “যবন আইসে আমরা যুদ্ধ করিব।”

 মাধবাচার্য কহিলেন “সাধু! সাধু! আপনার যেরূপ যশঃ সেইরূপ প্রস্তাব করিলেন। জগদীশ্বর আপনাকে কুশলী করুন। আমার কেবল এই জিজ্ঞাস্য যে যদি যুদ্ধই অভিপ্রায়, তবে তাহার কি উদ্যোগ হইয়াছে?”

 পশুপতি কহিলেন, “মন্ত্রণা গোপনেই বক্তব্য। এ সভাতলে প্রকাশ্য নহে। কিন্তু যে অশ্ব পদাতি এবং নাবিক সেনা সংগৃহীত হইতেছে কিছু দিন এই নগরী পর্যটন করিলে তাহা জানিতে পারিবেন।”