পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনী।

রজ-উৎকীর্ণ করিয়া অকস্মাৎ যূথপতি ভূতলে পড়িয়া গেল। অমনি তাহার মৃত্যু হইল।

 যাহারা সবিশেষ দেখিতে না পাইল, তাহারা বিবেচনা করিল যে বখ্‌তিয়ার খিলিজি কোন কৌশলে হস্তির বধসাধন করিয়াছেন। তৎক্ষণাৎ মুসলমান মণ্ডল মধ্যে ঘোরতর জয়ধ্বনি হইতে লাগিল। কিন্তু অন্যে দেখিতে পাইল যে হস্তীর গ্রীবার উপর একটী তীর বিদ্ধ রহিয়াছে। কুতবউদ্দীন বিস্মিত হইয়া সবিশেষ জানিবার জন্য মৃতগজের নিকট আসিলেন, এবং স্বীয় অস্ত্রবিদ্যার প্রভাবে বুঝিতে পারিলেন যে এই শরবেধই হস্তীর মৃত্যুর একমাত্র কারণ। বুঝিলেন যে শর, অসাধারণ বাহুবলে নিক্ষিপ্ত হইয়া স্থূল হস্তিচর্ম্মে, তৎপরে হস্তিগ্রীবার বিপুল মাংসরাশি ভেদ করিয়া মস্তিষ্ক বিদ্ধ করিয়াছে। শরনিক্ষেপকারীর আরও এক অপূর্ব্ব নৈপুণ্যলক্ষণ দেখিলেন। গ্রীবার যে স্থানে মস্তিষ্ক এবং মেরুদও মধ্যস্থ মজ্জার সংযোগ হইয়াছে[১] সেই স্থানেই তীর বিদ্ধ হইয়াছে। তথায় সূচিমাত্র প্রবিষ্ট হইলে জীবের প্রাণ বিনষ্ট হয়—পলকমাত্রও বিলম্ব হয়। এই স্থানে শর বিদ্ধ না হইলে কখনই বখ্‌তিয়ারের রক্ষা সিদ্ধ হইত না। কুতবউদ্দীন, আরও দেখিলেন তীরের গঠন সাধারণ হইতে ভিন্ন। তাহার ফলক অতি দীর্ঘ, সূক্ষ্ম, এবং একটী বিশেষ চিহ্নে অঙ্কিত। তিনি সিদ্ধান্ত করিলেন, যে, যে ব্যক্তি এই শর ত্যাগ করিয়াছিল, সে অসাধরণ বাহুবলশালী; তাহার শিক্ষা বিচিত্র, এবং হস্ত অতি লঘুগতি।

 কুতবউদ্দীন গজঘাতী প্রহরণ হস্তে গ্রহণ করিয়া দর্শকমণ্ড-


  1. Medulla Oblongata. পাঠক মহাশয় “ব্রাইড্ অব্ লেমরমূরে” এইরূপ একটী বৃত্তান্ত মনে পড়িতে পারে।