পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাহার পানে চাহিয়া ক্রোধে দাঁত কড়্‌মড়্‌ করিলেন।


॥সাত॥

 দিন পাঁচ-ছয় পরে একদিন বৈকালে বিপিন অত্যন্ত বিরক্ত-মুখে ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, এ-সব কি তুমি শুরু করলে মেজবৌ? কেষ্ট তোমার কে যে, একটা পরের ছেলে নিয়ে দিন-রাত আপনা-আপনির মধ্যে লড়াই করে বেড়াচ্চ? আজি দেখলাম, দাদা পর্য্যন্ত ভারি রাগ করেছেন।

 অনতিপূর্ব্বে নিজের ঘরে বসিয়া বড়বৌ স্বামীকে উপলক্ষ্য ও মেজবৌকে লক্ষ্য করিয়া চীৎকার-শব্দে যে সকল অপভাষার তীর ছুঁড়িয়াছিলেন, তাহার একটিও নিস্ফল হয় নাই। সব ক’টি আসিয়াই হেমাঙ্গিনীকে বিঁধিয়াছিল এবং প্রত্যেকটি মুখে করিয়া যে পরিমাণ বিষ বহিয়া আনিয়াছিল, তাঁহার জ্বালাটাও কম জ্বলিতেছিল না। কিন্তু মাঝখানে ভাশুর বিদ্যমান থাকায় হেমাঙ্গিনী সহ্য করা ব্যতীত প্রতিকারের পথ পাইতেছিলেন না।

 আগেকার দিনে যেমন যবনেরা গরু সুমুখে রাখিয়া রাজপুতসেনার উপর বাণ বর্ষণ করিত, যুদ্ধ জয় করিত, বড়বৌ মেজবৌকে আজকাল প্রায়ই তেমনি জব্দ করিতেছিলেন।

 স্বামীর কথায় হেমাঙ্গিনী দপ করিয়া জ্বলিয়া উঠিলেন। কহিলেন, বল কি, তিনি পর্য্যন্ত রাগ করেচেন? এ তে বড় আশ্চর্য্য কথা, শুনলে হঠাৎ বিশ্বাস হয় না যে! এখন কি করলে রাগ থামবে বল?

 বিপিন মনে মনে রাগ করিলেন, কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করা তাঁহার স্বভাব নয়, তাই মনের ভাব গোপন করিয়া সহজভাবে বলিলেন, হাজার হলেও গুরুজনের সম্বন্ধে কি-

 কথাটা শেষ হইবার পূর্ব্বেই হেমাঙ্গিনী কহিলেন, সব জানি, ছেলেমানুষটি নই যে, গুরুজনদের মান-মর্য্যাদা বুঝি নে। কিন্তু ছোঁড়াটাকে ভালবাসি বলেই যেন ওঁরা আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওকে

২৩