বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিবারাত্র বিঁধতে থাকেন। তাঁহার কণ্ঠস্বর কিছু নরম শুনাইল। কারণ, হঠাৎ ভাসুরের সম্বন্ধে শ্লেষ করিয়া ফেলিয়া তিনি নিজেই মনে অপ্রতিভ হইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহারও গায়ের জ্বালাটা নাকি বড় জ্বলিতেছিল, তাই রাগ সামলাইতে পারেন নাই।

 বিপিন গোপনে ও-পক্ষে ছিলেন। কারণ, এই একটা পরের ছেলে লইয়া নিরর্থক দাদাদের সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁটি তিনি মনে মনে পছন্দ করিতেন না। স্ত্রীর এই লজ্জাটুকু লক্ষ্য করিয়া জো পাইয়া জোর দিয়া বলিলেন, বেঁধা-বিঁধি কিছুই নয়। তাঁরা নিজেদের ছেলে শাসন করচেন, কাজ শেখাচ্ছেন, তাতে তোমাকে বিঁধিলে চলবে কেন? তা ছাড়া যা-ই করুন, তাঁরা গুরুজন যে।

 হেমাঙ্গিনী স্বামীর মুখের পানে চাহিয়া প্রথমটা কিছু বিস্মিত হইলেন। কারণ এই পনের-ষোল বছরের ঘরকন্নায় স্বামীর এত বড় ভ্রাতৃভক্তি তিনি ইতিপূর্ব্বে দেখেন নাই। কিন্তু পরমুহুর্ত্তেই তাঁহার সর্ব্বাঙ্গ ক্রোধে জ্বলিয়া উঠিল। কহিলেন, তাঁরা গুরুজন, আমিও মা। গুরুজন নিজের মান নিজে নিঃশেষ করে আনলে আমি কি দিয়ে ভর্ত্তি করব।

 বিপিন কি একটা জবাব বোধ করি দিতে যাইতেছিলেন, থামিয়া গেলেন। দ্বারের বাহিরে কুষ্ঠিতকণ্ঠে বিনম্র ডাক শোনা গেল-

 মেজদি।

 স্বামী-স্ত্রীতে চোখাচোখি হইল। স্বামী একটু হাসিলেন, তাহাতে শ্রীতিবিকীর্ণ হইল না। স্ত্রী অধরে ওষ্ঠ চাপিয়া কবাটের কাছে সরিয়া আসিয়া নিঃশব্দে কেষ্টর মুখের পানে চাহিতেই সে আহ্লাদে গালিয়া গিয়া প্রথমেই যা মুখে আসিল কহিল, কেমন আছ মেজদি।

 হেমাঙ্গিনী একমুহূর্ত্ত কথা কহিতে পারিলেন না। যাহার জন্য স্বামী-স্ত্রীতে এইমাত্র বিবাদ হইয়া গেল। অকস্মাৎ তাহাকে সম্মুখে পাইয়া বিবাদের সমস্ত বিরক্তিটা তাহারই মাথায় গিয়া পড়িল। হেমাঙ্গিনী অনুচ্চ কঠোরস্বরে কহিলেন এখানে কি? কেন তুই রোজ রোজ আসিস বল্‌ ত?

২৪