কেষ্টর বুকের ভিতরটা ধক্ করিয়া উঠিল। এই কঠোর কণ্ঠস্বরটা সত্যই এত কঠোর শুনাইল যে, হেতু ইহার যা-ই হোক, বস্তুটা যে সস্নেহ পরিহাস নয়, বুঝিয়া লইতে এই দুর্ভাগা বালকটার বিলম্ব হইল না।
ভয়ে, বিস্ময়ে, লজ্জায় মুখখান তাহার কালিমাখা হইয়া গেল। কহিল, দেখতে এসেচি।
বিপিন হাসিয়া বলিলেন, দেখতে এসেছে তোমাকে। এ হাসি যেন দাঁত ভ্যাংচাইয়া হেমাঙ্গিনীকে আপমান করিল। তিনি দলিতা ভুজঙ্গিনীর মত স্বামীর মুখের পানে একটিবার চাহিয়াই চোখ ফিরাইয়া লইয়া কহিলেন, আর এখানে তুই আসিস নে। —যা?
আচ্ছা, বলিয়া কেষ্ট তাহার মুখের কালি হাসি দিয়া ঢাকিতে গিয়া সমস্ত মুখ আরো কালো, আরো বিশ্রী বিকৃত করিয়া অধোমখে চলিয়া গেল।
সেই বিকৃতির কালো ছায়া হেমাঙ্গিনী নিজের মুখের উপর লইয়া গেলেন।
॥আট॥
দিন পাঁচ ছয় হইয়া গেল, হেমাঙ্গিনীর জ্বর ছাড়ে নাই। কাল ডাক্তার বলিয়া গিয়াছিলেন, সর্দ্দি বুকে বসিয়াছে। সন্ধ্যার দীপ সবেমাত্র জ্বালা হইতেছিল, ললিত ভাল কাপড়-জামা পরিয়া ঘরে ঢুকিয়া কহিল, মা, দত্তদের বাড়ি পুতুল নাচ হবে, দেখতে যাব?
মা একটুখানি হাসিয়া বলিলেন, হ্যাঁ রে ললিত, তোর মা যে এই পাঁচ-ছ’দিন পড়ে আছে, একবারটি কাছে এসেও ত বসিস্ নে।
ললিত লজ্জা পাইয়া শিয়রের কাছে আসিয়া বসিল। মা সস্নেহে ছেলের পিঠে হাত দিয়া বলিলেন, এই অসুখ যদি না সারে, যদি মরে যাই, কি করবি তুই। খুব কাঁদবি?
যাঃ-সেরে যাবে, বলিয়া ললিত মায়ের বুকের উপর একটা হাত রাখিল। মা ছেলের হাতখানি হাতে লইয়া চুপ করিয়া রহিলেন।
২৫