বুলাইয়া দিয়া বলিলেন, হাঁ রে কেষ্ট, বকেছিলুম বলে তোর মেজদিদিকে ভুলে গেছিল বুঝি?
সহসা কেষ্ট ফুঁপাইয়া কাঁদিয়া উঠিল। হেমাঙ্গিনী কিছু আশ্চর্য্য হইলেন, কারণ, কখনও কেহ তাহাকে কঁদিতে দেখে নাই। অনেক দুঃখ-কষ্ট-যাতনা দিলেও সে ঘাড় হেঁট করিয়া নিঃশব্দে থাকে, লোকজনের সুমুখে চোখের জল ফেলে না। তাঁহার এই স্বভাবটি হেমাঙ্গিনী জানিতেন বলিয়াই বড় আশ্চর্য্য হইয়া বলিলেন, ছি, কান্না কিসের? বেটা ছেলেকে চোখের জল ফেলিতে আছে কি?
প্রত্যুত্তরে কেষ্ট কোঁচার খুঁট মুখে গুঁজিয়া প্রাণপণ চেষ্টায় কান্না রোধ করিতে করিতে বলিল, ডাক্তার বলে যে, বুকে সর্দি বসেচে?
হেমাঙ্গিনী হাসিলেন-এই জন্যে? ছি ছি। কি ছেলেমানুষ তুই রে। বলিতে বলিতে তাঁর নিজের চোখ দিয়াও টপ্ টপ্ করিয়া দুফোঁটা জল গড়াইয়া পড়িল। বাঁ হাত দিয়া মুছিয়া ফেলিয়া তাহার মাথায় একটা হাত দিয়া কৌতুক করিয়া বলিলেন, সর্দি বসেচে বসলেই বা রে! যদি মারি, তুই আর ললিত কাঁধে করে গঙ্গায় দিয়ে আসবি-কেমন, পারবি নে?
বলি মেজবৌ, কেমন আছ আজ? বলিয়া বাড়বে দোরগোড়ায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। ক্ষণকাল কেষ্টর পানে তীক্ষ্ণ-দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, এই যে ইনি এসে হাজির হয়েচেন। আবার ও কি? মেজাগিন্নীর কাছে কেঁদে সোহাগ করা হচ্ছে যে! ন্যাকা আমার কত ফন্দীই জানে।
ক্লান্তিবশতঃ হেমাঙ্গিনী এইমাত্র বালিশে হেলান দিয়া কাত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তীরের মত সোজা হইয়া উঠিয়া বসিয়া কহিলেন, দিদি, আমার ছ-সাতদিন জ্বর তোমার পায়ে পড়ি, আজ তুমি যাও।
কাদম্বিনী প্রথমটা থিতামত খাইয়া গেলেন। কিন্তু পরীক্ষণে সামলাইয়া লইয়া বলিলেন, তোমাকে বলিনি মেজবৌ। নিজের ভাইকে শাসন কচ্ছি, তুমি অমন মারমুখী হয়ে উঠচ কেন?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, শাসক ত রাত্রিদিনই চলছে-বাড়ি গিয়ে
২৭