কোরো, এখানে আমার সামনে করবার দরকার নেই, করতেও দেব না?
কেন, তুমি কি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে না কি?
হেমাঙ্গিনী হাতজোড় করিয়া বলিলেন, আমার বড় অসুখ দিদি, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, হয় চুপ কর-নয় যাও।
কাদম্বিনী বলিলেন, নিজের ভাইকে শাসন করতে পাব না?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, বাড়ি গিয়ে কর গে।
সে আজ ভাল করেই হবে। আমার নামে লাগান-ভাঙান আজ বার করব-বজ্জাত মিথ্যুক কোথাকার। বললুম। গরুর দড়ি নেই কেষ্টা, দু-আঁটি পাট কেটে দে-না ‘দিদি তোমার পায়ে পড়ি, পুতুলনাচ দেখে আসি-” এই বুঝি পুতুলের নাচ হচ্চে রে? বলিয়া কাদম্বিনী গুম্গুম করিয়া পা ফেলিয়া চলিয়া গেলেন।
হেমাঙ্গিনী কতক্ষণ কাঠের মত বসিয়া থাকিয়া শুইয়া পড়িয়া বলিলেন, কেন তুই পুতুল-নাচ দেখতে গেলি নে কেষ্ট? গেলে ত এইসব হ’ত না। আসতে যখন তোকে ওরা দেয় না ভাই, তখন আর আসিস্ নে আমার কাছে।
কেষ্ট আর কথাটি না কহিয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আমাদের গাঁয়ের বিশালাক্ষী ঠাকুর বড় জাগ্রত মেজদি, পুজো দিলে অসুখ সেরে যায়। দাও না মেজদি।
এইমাত্র নিরর্থক ঝগড়া হইয়া যাওয়ায় হেমাঙ্গিনীর মনটা ভারী বিগড়াইয়া গিয়াছিল, ঝগড়া-ঝাঁটি ত হয়ই-সেজন্যও নয়। এমন একটা রসাল ছুতা পাইয়া এই হতভাগার দুর্দশা যে কিরূপ হইবে, আসলে সেই কথাটা মনে মনে তোলাপাড়া করিয়া তাঁহার বুকের ভিতরটা ক্ষোভে ও নিরুপায় আক্রোশে জ্বলিয়া উঠিয়াছিল। কেষ্ট ফিরিয়া আসিতেই হেমাঙ্গিনী উঠিয়া বসিলেন, এবং কাছে বসাইয়া গায়ে হাত বুলাইয়া দিয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন। চোখ মুছিয়া বলিলেন, আমি ভালো হয়ে তোকে লুকিয়ে পূজো দিতে পাঠিয়ে দেব। পারবি একলা যেতে?
২৮