শুক। তুমি এই পক্ষীর কথা মতন যুদি[১] কাম[২] কর, তা অইলে তোমার বাপের কালান্যা[৩] যে সমুত্তি[৪]—সব ফির্যা[৫] পাইবা। এইকথা শুন্যা সদাগর খুব সুখী অইয়া শুকপক্ষী রাখল, সন্ন্যাসী বিদায় অইয়া চল্যা গেলাইন।
একদিন সদাগর ধর্ম্মমতি শুকেরে জিজ্ঞাসা কর্ল,—
“কও কও শুক পংখীরে আমার বিবরণ।
আমার না দুঃখের দিন যাইব কখন॥
রত্নমন্দির আমার ভাঙ্গ্যা অইল মাটি।
ভূমিতে পড়িয়া শুই নাই একখান চটি॥
পানি যে তুলিয়া খাই নাই ঝাড়িঝুড়ি।
পন্থের ফকীর অইয়া দেশে দেশে ঘুরি॥
বাপের কাল্যা আত্তি[৬] ঘোড়ারে পংখী—
পংখী আরে—কত যে আছিল।
বিপদে ফালাইয়া পংখী—
পংখী আরে—দৈবে হইরা[৭] নিল॥
এক পুত্ত্রু এক কন্যারে পংখী বংশের বাতি জ্বলে।
কি দিয়া পালিবাম[৮] পংখী সেই না দুই ছাওয়ালে[৯]॥”
শুক-
কাইন্দ না কাইন্দ না[১০] সাধু না কান্দিও আর।
দুঃখের যে দিন সাধু যাইব তোমার॥
হাতের ছিরি আঙ্গুইট্ সাধু রে বিকাইয়া[১১] সহরে।
ভাঙ্গা ডিঙ্গা বান্ধাইতে[১২] আন কারিগরে[১৩]॥
- ↑ যুদি=যদি।
- ↑ কাম=কাজ; কর্ম্মের অপভ্রংশ।
- ↑ কালান্যা=কালীন, সময়ের।
- ↑ যে সমুক্তি=যে সমস্ত।
- ↑ ফির্যা=ফিরিয়া।
- ↑ আত্তি=হাতী।
- ↑ হইরা=হরণ করিয়া।
- ↑ পালিবাম=পালন করিব।
- ↑ ছাওয়াল=সন্তান, শুধু পুরুষ ছেলে নয়।
- ↑ কাইন্দ না=কাঁদিয়ো না।
- ↑ বিকাইয়া=বিক্রয় করিয়া।
- ↑ বান্ধাইতে=বাঁধিতে; পুনর্গঠন করিতে।
- ↑ কারিকর=কারিগর; মিস্ত্রী।