(১২)
তখন সদাগর চলিয়া গেল। একলা পড়িয়া কাজলরেখা মন্দিরের মধ্যে। সঙ্গের সাথী একমাত্র বাপ, সেও তাকে এক্লা ফালাইয়া[১] গেল। তখন কন্যা সেই মরা কুমারের শিওরে বইয়া কান্তে লাগ্ল।
গান—
“জাগ জাগ সুন্দর কুমার রে কত নিদ্রা যাও।
আমি অভাগিনী ডাকি আঁখি মেইল্যা[২] চাও॥
জন্মিয়া না দেখ্ছে কভু তোমায় অভাগিনী।
বাপে ত কহিয়া গেছে তুমি মোর স্বামী॥
বাপ ত নিষ্ঠুর হইয়া দিল বনবাসে।
তিনদিন তিনরাত্রি কাইট্যাছে[৩] উবাসে[৪]॥
চান্দের ছুরত[৫] কুমার তোমার কাম-তনু[৬]।
মেঘেতে ঢাকিয়া যেমন প্রভাতের ভানু॥
কেম্নে হইল এমন দশা কে করিল তোর।
বনেতে এড়িয়া মরা পলাইছে দূর॥
তোমার যে নাও বাপ না জানি কেমন।
বংশের পরদীম[৭] পুত্র রাইখ্যা গেছে বন॥
আমার বাপের মত সে কি নিষ্ঠুর কপটী।
বনে এড়ি মরা পুত্রে মনে দিছে ভাটী[৮]॥
যে হও সে হও প্রভু তুমি ত সোয়ামী।
যতকাল দেহ তোমার ততকাল আমি॥
মুখ মেইল্যা কও কথা আঁখি মেইল্যা চাও।
জাগিয়া উত্তর দেও মোরে না ভাড়াও[৯]॥
কর্ম্মদোষে বেউলা রাড়ী[১০] শিরেতে বসিয়া।
মরা পতির কাছে বাপে দিয়া গেছে বিয়া॥”