পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপক্রমণিকা । q আরম্ভ। দিবাশেষে নৌকার বহর নয়াবাদের নিম্নে আসিয়া রাত্রিবাস করিত, রাত্রিতে কেহ নৌকা খুলিতে সাহসী হইত না। লোকে বলে যে, রাত্রিতে কোন দুঃসাহসিক মাঝি নৌকা খুলিতে গেলে জঙ্গলের মধ্য হইতে বন-দেবতা তাহাকে বারণ করিয়া বলিতেন “খুলে না, খুলে না।” বেস্থান হইত এই “খুলে না” শব্দ হইত বা কোন একবার হইয়াছিল, তাহারই নাম হইয় গেল—খুলন। হয়ত খুলনা শব্দের অক্ষর বিষ্ঠাস হইতে কল্পনা-কৌশলেই এইরূপ বুৎপত্তি বাহির হইয়াছে। “কবিকঙ্কণ” কৃত চণ্ডীকাবা হইতে জানি যে পূৰ্ব্বে বৰ্দ্ধমান জেলায় অজয় নদের তটে–উজানি (উজ্জয়িনী) নামে নগর ছিল। এইস্থানে এক সাধু বা সওদাগর বাস করিতেন ; তাহার নাম ধনপতি। তিনি শুধু নামে ধনপতি নছেন ; বঙ্গ ভরিয়া বাণিজ্য করিয়া, তিনি প্রকৃত কাজেও ধনপতি হইয়াছিলেন। ধনপতির দুই স্ত্রী-লহনা ও খুল্লনা । যেমন সৰ্ব্বত্র হয়, দুই স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ও প্রকৃতির পার্থক্য যথেষ্ট ছিল ; জ্যেষ্ঠা লহন ক্রুরা ও হিংসাপরায়ণ, কনিষ্ঠ খুল্লনা সাধবী ভক্তিমতী আদর্শ স্ত্রী। একদা ধনপতির অনুপস্থিতি কালে লহন তাহার সত। খুল্লনাকে যৎপরোনাস্তি কষ্ট দিয়াছিল। উহাতে খুল্লনার চরিত্র পরীক্ষিত হইল এবং স্বামী ফিরিয়া আসিলে, অচিরে তাহার মুখের দিনও ফিরিল। খুল্লনা তখন স্বামি-হৃদয়ের ষোল আনা অধিকার করিয়! আদরিণী হইয় বসিল । প্রবাদ প্রচলিত আছে যে এই খুল্লনা নাম হইতেই ‘খুলনা’ নামের উৎপত্তি হইয়াছে। পূৰ্ব্বে বণিকৃগণের বাণিজ্যতরী সৰ্ব্বদেশে ফিরিত। তাহায়া স্বদেশী পণ্যে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড “ডিঙ্গা” সাজাইয়া দেশে বিদেশে সমুদ্রপারে বহুস্থানে বাণিজ্য করিতে যাইত এবং বিদেশের অর্থে দেশের ধনবৃদ্ধি করিত। এক সময়ে এই বণিকৃদিগের মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষ প্রধান ও প্রতিপত্তিশালী ছিলেন, চাদ বা চন্দ্রধর সওদাগর। ধনপতি পিতৃশ্ৰাদ্ধকালে তাহারই চরণে প্রথম অর্ঘ্য দিয়াছিলেন। চাদ সওদাগরের বাণিজ্যতরী না যাইত, এমন স্থান নাই। বঙ্গের দক্ষিণকুলে প্রধান প্রধান সমস্ত বন্দর বা বাজারের সহিত র্তাহার কারবার চলিত। সেই সকল স্থানে নানাভাবে তাহার কীৰ্ত্তিচিহ্ন থাকিয়া যায়। উহারই পরিচয়ে আজ, বহুজেলার লোকে বাড়ীর কাছে চাদ সওদাগরের বসতিস্থান ছিল বলিয়া দাবি

  • "সবার অধিক বটে চাদ মহাতেঙ্গা;" তাই ধনপতি "আগে জল দিলচাদবেশের চরণে" কবিকঙ্কণ চণ্ডী, ইণ্ডিয়ান গ্রেস সংস্কর, ১৮ পৃষ্ঠা।