পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

আমার সঙ্গে তাঁর মতের সম্পূর্ণ মিল হল দেখে তিনি ভারী খুশি হলেন; তিনি আমাকে বিশেষ করে তার বাড়ি যেতে অনুরোধ করলেন ও বললেন, সেখানে গিয়ে আমরা দুজনে সাহিত্য আলোচনা করব। ইনি ইংরিজি সাহিত্য ও তাঁর নিজের দেশের রাজনীতি ভালো রকম করে চর্চা করেছেন, কিন্তু যেই ভারতবর্ষের কথা উঠল অমনি তাঁর অজ্ঞতা বেরিয়ে পড়ল। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ‘কোন্ রাজার অধীনে?’ আমি অবাক হয়ে বললুম, ‘ব্রিটিশ গবর্মেণ্টের।’ তিনি বললেন, ‘তা আমি জানি, কিন্তু আমি বলছি কোন্ ভারতবর্ষীয় রাজার অব্যবহিত অধীনে।’ কী ভয়ানক! কলকাতার বিষয়ে এঁর জ্ঞান এই রকম। তিনি অপ্রস্তুত হয়ে বললেন— ‘আমার অজ্ঞতা মাপ করবেন; ভারতবর্ষের বিষয়ে আমাদের ঢের জানা উচিত, কিন্তু লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করছি আমি এ বিষয়ে খুব কম জানি।’ এই রকম বোটের ছাতের উপর আমাদের কথাবার্তা চলতে লাগল; আমাদের মাথার উপরে একটা কাপড়ের আচ্ছাদন আছে; বোটের ঘরের মধ্যে আহারের আয়োজন হচ্ছে, সেখেনে স্থান নেই! মাঝে মাঝে টিপ্ টিপ্ করে বৃষ্টি হচ্ছে, কাপড়ের আচ্ছাদনে সেটা নিবারণ করছে। কিন্তু হঠাৎ এমন ঘোরতর বাতাস ও বৃষ্টি হতে আরম্ভ হল যে কিছুতে নিবারণ হবার যো নেই। যে দিকে বৃষ্টির ছাঁট পৌঁচচ্ছে না সেই দিকে মেয়েদের রেখে আমরা আর-এক পাশে এসে ছাতা খুলে দাঁড়ালুম। ওমা, দেখি, আমাদের দিশি বন্ধু। ক— মহাশয় সেই মেয়েদের ভিড়ের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন, আমি তাঁকে যথেষ্ট ঠাট্টা করে নিয়েছিলেম; তিনি বার বার করে বললেন যে, বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া ছাড়া তাঁর অন্য অভিসন্ধি ছিল না। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি তা বিশ্বাস করি নে। আমি তাঁকে তখনি শাসিয়ে

১০৪