পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

ক্ষণ বাদে ডাক্তারের ঘরে গেলুম, সে আমার হাত বেঁধে দিলে―দিতে দিতে মাথা ঘুরে এল, অন্ধকার দেখতে লাগলুম, কানে শুনতে পেলুম না― এমনি লজ্জা করতে লাগল! অনর্থক অনেক রক্তব্যয় করেছি— না দেশের জন্যে, না ধর্মের জন্যে, না স্বার্থের জন্যে। সমস্ত দিন কিছু-না-কিছু লিখেছি। আমরা এদের সকলকে দূরে পরিহার করে যে রকম একটা কোণ ঘেঁষে আছি তাতে বেশ বােঝা যায় এরা একটু piqued হয়, আমার সেটা মন্দ লাগে না। ভাবে এরা কজন বিদ্রোহী নব্যবঙ্গবাসী।

এমন মধুর ক’রে তুমি ভাবিতে পারাে না মােরে—
এমন স্বপন এমন বেদন এমন সুখের ঘােরে।
এমন বাতাস জলের বিলাস এমন আকাশ -মাঝে,
শুনিতে পাও না কেমন করিয়া উদাস বাঁশরী বাজে!
এমন অলস বেলা, অলস মেঘের মেলা,
সারাদিন ধরে জলেতে আলােতে এমন অলস খেলা!
জীবনতরণী ভাসিয়া চলেছে মরণ-অকূল-বাগে,
দিবসে নিশীথে সুদূর হইতে তােমার বাতাস লাগে।
এমনি করিয়া ধীরে  মিশাব সুদূর নীরে,
যেমন করিয়া সন্ধ্যানীরদ মিশায় নিশীথতীরে।
তখন বারেক চাহিয়া দেখিয়ো করুণ নয়ন তুলি—
বিদায়ের পথ আঁধারে ঢাকিবে, তার পরে যেয়ো ভুলি।
সন্ধ্যা আসিবে যবে  তোমার মধুর ভবে
দিবসের শেষে শ্রান্ত হইবে জীবনের কলরবে—
তখন বারেক আসিয়াে আবার দাঁড়াইয়ো ঐখানে,
ক্ষণেকের তরে চেয়ে দেখাে ঐ অস্ত-অচল-পানে

১৫৩