পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ভেবে দেখলুম, আমি গিয়েছি একজন প্রাচীন ভদ্রলোকের ব্যক্তিগত মতামত জানবার জন্যে, এখানে তর্কাতর্কি না করাই উচিত। অতএব একেবারেই চুপ মেরে গেলুম।

 মনোমোহনবাবু বলতে লাগলেন,—‘ফিরিঙ্গীদের দেখাদেখিই এদেশে পতিতা নিয়ে অভিনয়ের প্রথা এসেছে। বিলাতী নটীরাও নামেই ভদ্র, আসলে কুলটা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের সব কাজেই ফিরিঙ্গীদের অনুকরণ। দেখুন না, জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠা করব, নাম দেওয়া হ’ল “ন্যাশনাল থিয়েটার।” মাতৃভাষাকে আমরা ঘৃণা করি। তাই টিকিট আর বিজ্ঞাপনেও ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করা হয়। “ন্যাশনাল থিয়েটারে”র সাংবাৎসরিক উৎসবে আমাকে বক্তৃতা দিতে ডেকেছিল। বক্তৃতাতেও আমি ঐ সব কথা উল্লেখ করি। কিন্তু আমার বলা মুখব্যথা মাত্র, কে শুনবে আমার কথা, ফিরিঙ্গীয়ানা যে আমাদের অস্থি-মজ্জার মধ্যে প্রবেশ করেছে! তারপর কত-কাল কেটে গিয়েছে, অবস্থার কোন উন্নতি হয় নি। আজও সব নাট্যশালার বিলাতী নাম, সব টিকিটের উপরে ইংরেজী অক্ষর।

 ভেবেছিলুম ভদ্রলোকের সঙ্গে আরো দু-একবার দেখা করব, কিন্তু সে সুযোগ আর পাইনি। কারণ তার অল্পদিন পরেই (১৩১৮ সালে) তিনি পরলোকগমন করেন।

 বাংলা রঙ্গালয়ের নামে, বিজ্ঞাপনে, এমন কি প্রবেশপত্রের উপরেও ইংরেজী ভাষার অশোভন প্রভাব সম্বন্ধে বসু মহাশয় যে সব অভিযোগ করেছিলেন তা যে অত্যন্ত সঙ্গত, সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই। এখানে দেশাত্মবোধ পরিপূর্ণ ভাবে জাগ্রত হবার পরেও বাঙালীরা কথায়, লেখায় ও বক্তৃতায় ইংরেজীর মোহ কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারেন নি।

১৯