পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দুই

 বাবার একটি অনতিবৃহৎ পুস্তকাগার ছিল। ইংরেজী ও বাংলা দুইশ্রেণীর কেতাবই সাজানো থাকত আলমারিতে। সেখানে প্রায়ই অনধিকার প্রবেশ করতুম গোপনে। ইংরেজী বই প’ড়ে বুঝবার বয়স তখনো হয় নি। তাই প্রদীপ্ত আগ্রহে আক্রমণ করতুম বাংলা বইগুলিকেই। এই পুস্তকাগারের দৌলতে বালক বয়স পার হবার আগেই তখনকার বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে করেছিলুম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন।

 ঐ পুস্তকাগারে ব’সেই গিরিশচন্দ্রের রচনার সঙ্গে প্রথমে পরিচিত হই। কিন্তু তাঁর নাটকগুলি পড়তে আমার ভালো লাগে নি, এখনো ভালো লাগে না। এজন্য তাঁর লিখিত নাটকগুলিকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ গিরিশচন্দ্র সেগুলিকে মঞ্চের জন্যে অভিনয়ের উপযোগী ক’রে লিখেছিলেন—সংস্কৃতে ও ইংরেজীতে যাকে বলে যথাক্রমে ‘দৃশ্যকাব্য’ ও ‘প্লে’। সেগুলির নাটকীয় ক্রিয়া, আখ্যানবস্তু, পাত্র-পাত্রী ও সংলাপ প্রভৃতি মঞ্চের উপরে এমন যথাযথভাবে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে যে, তাদের নাটকত্ব ও নাট্যকারের প্রতিভা চিত্তকে একেবারে অভিভূত ক’রে দেয় এবং তখনই গিরিশচন্দ্রের অতুলনীয় বিশেষত্ব সম্বন্ধে সচেতন না হয়ে থাকা যায় না।

 গিরিশচন্দ্রের অভিনয়োপযোগী নাটকগুলি পাঠোপযোগী হয় না ব’লে বহু বিখ্যাত সাহিত্যিককেই তাঁর সম্বন্ধে ভ্রান্ত মত পোষণ করতে দেখেছি। “প্লে”র মধ্যে তাঁরা খোঁজেন কাব্য বা সাহিত্যরস।

২১