পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ভাষায় কাব্যরস বা সাহিত্যরস বিতরণের চেষ্টা করতেন না। কিন্তু ক্ষীরোদপ্রসাদ ও দ্বিজেন্দ্রলাল প্রথমে ছিলেন কবি, পরে তাই নাটকেও উচ্চশ্রেণীর কাব্যরসকে পরিহার করতে পারেন নি এবং এইজন্যে তাঁদের নাটক নট-নাট্যকারদের নাটকের চেয়ে পাঠ ক’রে বেশী আনন্দ পাওয়া যায়।

 স্বদেশী আন্দোলনের যুগে নাট্যজগৎ থেকে সর্বপ্রথম সাড়া দিয়েছিলেন ক্ষীরোদপ্রসাদ, জাতীয় ভাবদ্যোতক নাটক “প্রতাপাদিত্য” রচনা ক’রে। গত শতাব্দীতে যখন মহাত্মা গান্ধীও অচ্ছূত বা অস্পৃশ্যদের পক্ষাবলম্বন করেন নি, তখন তিনি “কুমারী” নাটকে সেই সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তাঁর “রঘুবীরে”ও হিংসা ও অহিংসা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তাশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর “আলমগীর” নাটকে দেখি, পরস্পরের প্রবল শত্রু হয়েও জাতির ও দেশের কল্যাণের জন্যে হিন্দু ও মুসলমান পরস্পরের প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ হ’তে পারে। একদিকে তিনি যেমন হালকা কৌতুক-নাট্য রচনা ক’রে তরল আনন্দ বিতরণের চেষ্টা করেছেন, অন্য দিকে তেমনি বিদগ্ধমণ্ডলীর উপযোগী চিন্তার খোরাক যোগাতেও কুণ্ঠিত হন নি কিছুমাত্র।

 “জাহ্নবী” পত্রিকার জন্যে লেখার তাগিদ দিতে গিয়ে সর্বপ্রথমে দেখি ক্ষীরোদপ্রসাদকে। একহারা দেহ, বর্ণ কৃষ্ণ, মুখ হাসিমাখা, সরল ও মিষ্ট কথাবার্তা, কোনরকম Pose বা ভঙ্গী নেই। দেখলেই সেকালের ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের কথা স্মরণ হয়।

 বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মোৎসব উপলক্ষে আমন্ত্রিত হয়ে সাহিত্যিক বন্ধুদের সঙ্গে কাঁঠালপাড়ায় যাচ্ছিলুম। ঠিক কোন্ সালে মনে নেই, তবে একত্রিশ-বত্রিশ বৎসর আগের কথা। শিয়ালদহ স্টেশনে ক্ষীরোদপ্রসাদও আমাদের কামরায় এসে উঠলেন এবং সকলের

৫২