পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সঙ্গে একেবারে ঘরের লোকের মত গল্প জুড়ে দিলেন। খানিকক্ষণ পরে বুঝলুম, বয়সে তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন বটে, কিন্তু তাঁর স্বভাব এখনো আছে বালকের মতই তাজা ও অকপট। প্রসঙ্গক্রমে আমি পূরাতন “জন্মভূমি”তে প্রকাশিত তাঁর রচিত একটি কবিতার কথা উল্লেখ করলুম।

 তিনি শিশুর মত উৎফুল্ল হয়ে উঠে বললেন, ‘আপনি পড়েছেন? আপনি পড়েছেন? হ্যাঁ, সেটি আমার খুব ভালো কবিতা, প্রেরণা না পেলে তেমন কবিতা কেউ লিখতে পারে না!’ তারপরেই তিনি সোজা হয়ে ব’সে, উচ্চকণ্ঠে ভাবভঙ্গীর সঙ্গে হাত নেড়ে গড় গড় ক’রে সেই তিন-চার যুগ আগেকার লেখা সমগ্র কবিতাটি আবৃত্তি ক’রে গেলেন। অবাক্ হয়ে ভাবতে লাগলুম, এত রাশি রাশি, ভারি ভারি নাটকের চাপেও এত বৎসর পরে একটিমাত্র স্বরচিত কবিতা তাঁর স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে লুপ্ত হয়ে যায় নি! নিশ্চয়ই নিজের রচনার উপরে তাঁর অপরিসীম শ্রদ্ধা!

 আর একদিনও পেলুম বালকতার পরিচয়। ষ্টার থিয়েটারে তখনও “অযোধ্যার বেগম” খোলা হয়নি এবং শিশিরকুমারও দেখা দেন নি সাধারণ রঙ্গালয়ে। স্বর্গীয় বন্ধু অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব’সে ব’সে আলাপ করছি, এমন সময়ে একখানি পাণ্ডুলিপি হাতে ক’রে ক্ষীরোদপ্রসাদের আবির্ভাব। খানিকক্ষণ কথাবার্তার পরেই তিনি বললেন, ‘এইবারে আমার নাটক প’ড়ে শোনাব।’

 অপরেশচন্দ্র বললেন, “পড়ুন।”

 কিন্তু নাটকপাঠের কোন চেষ্টাই দেখা গেল না। কিছুক্ষণ চুপ ক’রে ব’সে থেকে ক্ষীরোদপ্রসাদ আবার বললেন, ‘এইবার আমার নাটক প’ড়ে শোনাব।’

 অপরেশচন্দ্র নিরুত্তর। আবার কিছুক্ষণ নীরব থেকে ক্ষীরোদ-

৫৩