পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

শ্রদ্ধা ছিল যথেষ্ট এবং ঐ পদ্ধতিতে মাঝে মাঝে তিনিও তুলিকা-চালনা ক’রে উচ্চশ্রেণীর নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর স্বাধীন মন কোন এক বিশেষ পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে চায় নি। চেষ্টা করলে তাঁর হাতের কাজের ভিতর থেকে জাপানী, চৈনিক ও য়ুরোপীয় প্রভাবও আবিষ্কার করা যেতে পারে। কিন্তু তিনি যেখান থেকে যা-কিছু গ্রহণ করেছেন, দেশী ছাঁচে ঢেলে একেবারে নিজের ক’রে নিতে পেরেছেন। বিলাতী চিত্রকর হুইস্‌লারের (‘আর্ট ফর্ আর্টস্ সেক্’ মন্ত্রের উদ্ভাবক) উপরে পড়েছিল জাপানী প্রভাব, কিন্তু তাঁর ছবি হ’ত য়ুরোপীয় ছবিই।

 গগনেন্দ্রনাথ ‘কিউবিজম্’ নিয়ে আশ্চর্য দক্ষতা দেখিয়েছেন। য়ুরোপীয় আর্টে ‘কিউবিজম্’ অনেক সময়ে যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গের মত হয়ে ওঠে। কিন্তু ‘কিউবিষ্ট’দের পদ্ধতি তিনি এমন সংযত ও যথাযথ ভাবে ব্যবহার করেছেন যে, তাঁর ছবিগুলি কেবল বাংলার উপযোগী হয়েই ওঠে নি, সেইসঙ্গে প্রকাশ করেছে বিচিত্র সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যও। ডক্টর এইচ কজিনসও স্বীকার করেছেন, ‘য়ুরোপের ‘কিউবিষ্ট’রাও এমন চমৎকার ছবি আঁকতে পারে না।’

 বাংলা চিত্রকলায় তাঁর একটি অভিনব দান হচ্ছে, সামাজিক ব্যঙ্গচিত্র। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজ চিত্রকর হোগার্থের মত তিনিও নিজের সমাজের অবিচার ও ব্যভিচার প্রভৃতি নিয়ে অনেকগুলি অসাধারণ ছবি এঁকে গিয়েছেন, তার প্রত্যেকখানি শিল্পীর সূক্ষ্ম দৃষ্টি, মুক্ত মন, গভীর চিন্তাশীলতা ও রসমধুর কল্পনার পরিচয় দেয়। প্রত্যেক ছবিতেই পটুয়ার তুলি যে গল্প বলতে চেয়েছে, কোন সেরা লেখকের কলমও তা আরো ভালো ক’রে ফোটাতে পারত না। কেবল বিষয়বস্তুর জন্যে নয়, রেখার খেলার জন্যেও ছবিগুলিকে অনন্যসাধারণ বলতে পারি। এক-একটি তুলির টান

৬৬