পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

যেন রেখায় লেখা এক-একটি কবিতা। শেষোক্ত বিশেষত্বটি গগনেন্দ্রনাথের যে কোন চিত্রে বর্তমান। তিনি ছিলেন যথার্থ কবি-মনের অধিকারী।

 অনেক বছর আগেকার কথা। কিছুকাল গভর্নমেণ্ট আর্ট স্কুলে গিয়ে চিত্রবিদ্যা শিক্ষা করেছিলুম। সেই সময়ে স্কুল-বাড়ীর উপরতলায় প্রাচ্য চিত্রকলার প্রথম প্রদর্শনী খোলা হয়। সেখানে দেখানো হয় প্রাচীন ও আধুনিক দুই রকম ছবিই। প্রাচ্য ও প্রতীচ্য চিত্রের মধ্যে প্রথম যে যে পার্থক্য চোখে পড়ল তা হচ্ছে এই: বিলাতী ছবি দেখাতে চায় রঙের ঘটা এবং দেশী ছবিতে পাওয়া যায় রেখার সমারোহ। এবং বিলাতী শিল্পীরা হচ্ছেন প্রকৃতির অনুকারী, আর দেশী শিল্পীরা প্রতিকূল না হ’লেও অনুকারী নন।

 বিলাতী পদ্ধতিতে শিক্ষিত এক শিল্পী বন্ধুর সঙ্গে প্রদর্শনীর ছবিগুলি দেখছিলুম। একখানি প্রাচীন চিত্র দেখতে দেখতে আমাদের দুজনের মধ্যে তর্ক বেধে গেল। বন্ধু সে ছবির ভিতরে দেখবার মত কিছুই খুঁজে পেলেন না। আমি চিত্রকরের সূক্ষ্ম তুলির কাজের প্রশংসা করছিলুম। সেই সময়ে একজন প্রিয়দর্শন ভদ্রলোক দাঁড়িয়েছিলেন ঠিক আমাদের পিছনে। মুখ টিপে হাসতে হাসতে তিনি আমাদের তর্কাতর্কি শুনছিলেন। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘এই ছবিখানির একটা বিশেষত্ব দেখবেন?’ তাঁর হাতে ছিল একখানা আতশী-কাঁচ, সেখানা তিনি ছবির উপরে ধরলেন। যা দেখলুম, বিস্ময়কর! ছবিখানি খুব ছোট। ছবির মূর্তি আরো। ছোট— দুই ইঞ্চির বেশী বড় হবে না। কিন্তু অতটুকু মূর্তির মাথার চুলগুলি আঁকতে ব’সে পটুয়া কেবল খানিকটা কালো রং বুলিয়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত হন নি, একমনে ব’সে ব’সে সযত্নে প্রত্যেক চুলগাছি

৬৭