পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আলাদা আলাদা ক’রে এঁকেছেন! সেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কারুকার্য নগ্ন চক্ষে ধরা পড়ে না! বিশেষজ্ঞের মুখে শুনেছি প্রাচীন ভারতীয় চিত্রকররা অতি সূক্ষ্ম কাজ করতেন যে-রকম তুলি নিয়ে, তাতে থাকত কেবল কাঠবিড়ালের একগাছি চুল! অবাক হয়ে দুই বন্ধুতে দাঁড়িয়ে রইলুম। তারপর ফিরে দেখি, সেই ভদ্রলোক আর একদল দর্শকের কাছে গিয়ে সকলকে আর এক খানা ছবির বিশেষত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। জনসাধারণের অজ্ঞতা দূর করবার জন্যে যাঁর এতটা আগ্রহ, তাঁর নাম জানবার জন্যে মনে জাগল কৌতূহল। শুনলুম তাঁর নাম গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

 সেই দিনই প্রদর্শনীতে তাঁর হাতে আঁকা ছবি দেখি সর্বপ্রথমে। মনের মধ্যে আজও জেগে আছে তার সবুজ স্মৃতি। একরত্তি ছবি, তারও সব জায়গায় পড়েনি চিত্রকরের তুলির স্পর্শ। পদ্মানদীর চরে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে এক নারীমূর্তি—শ্বেত বসন, কাঁকালে কলসী। সামান্য বিষয়বস্তু, মাত্র গুটিকয় রেখা, কিন্তু তার মধ্যেই পাওয়া গেল অসামান্য ও ইঙ্গিতময় সৌন্দর্যের আশ্চর্য মাধুর্য। একাধারে রেখাচিত্র এবং রেখাকাব্য।

 ঠাকুরবাড়ীতে সর্বপ্রথমে “ফাল্গুনী”র যে অভিনয় আয়োজন হয়, সেখানে চিত্রকর গগনেন্দ্রনাথকে দেখেছিলুম অভিনেতারূপে। তাঁর নাট্যানুরাগও বংশানুক্রমে লব্ধ। বাংলাদেশে প্রথমে যে কয়টি নাট্য-প্রতিষ্ঠান নাট্যকলাচর্চার সূত্রপাত করেছিল, জোড়াসাঁকো নাট্যশালা তাদের মধ্যে একটি প্রধান স্থান অধিকার ক’রে আছে। সেখানে গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর (‘বাবুবিলাস’ নাটক প্রণেতা), গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর (ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর) প্রভৃতির চেষ্টায় অভিনয়ের আসর বসত। গগনেন্দ্রনাথও যে সখ ক’রে তাঁদের অনুগামী হবেন, এ হচ্ছে স্বাভাবিক ব্যাপার। কেবল

৬৮