পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তিনি নন, তাঁর আর দুই সহোদরও (সমরেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ), রঙ্গমঞ্চের উপরে আবির্ভূত হয়েছেন।

 “ফাল্গুনী” পালায় গগনেন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছিলেন রাজার ভূমিকা। রঙ্গমঞ্চের উপরে রাজা সেজে আরো কত লোককেই নামতে দেখেছি, কিন্তু সকলকেই নকল রাজা ব’লে মনে হয়েছে। গগনেন্দ্রনাথই প্রথম আমাদের দেখিয়েছিলেন সত্যিকার রাজাকে। তাঁর চলা-ফেরা, ভাবভঙ্গি ও কথাবার্তা সমস্তই হয়েছিল রীতিমত রাজমহিমাব্যঞ্জক। যেমন তাঁকে মানিয়েছিল, তেমনি তাঁর অভিনয়ও হয়েছিল চমৎকার। তারপরেও অন্য পালায় তাঁর নাট্যনৈপুণ্য দেখে বেশ বুঝতে পেরেছি, তিনি ছিলেন একজন উচ্চশ্রেণীর অভিনেতা।

 গগনেন্দ্রনাথের সঙ্গে আলাপ করবার সুযোগ পেয়েছি ঠাকুরবাড়ীর বহু বৈঠকেই। মাঝে মাঝে আর্ট ও সাহিত্য নিয়েও তাঁর সঙ্গে করেছি অল্পস্বল্প আলোচনা। একদিন ‘কিউবিজ্‌মে’র প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘য়ুরোপের ‘কিউবিষ্ট’রা সকলকে অবাক ক’রে দেবার চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু তাঁদের পদ্ধতি একেবারে নতুন কিছু নয়। অজন্তার ছবি তো কতকাল আগেকার জিনিষ, কিন্তু যার চোখ আছে সে অজন্তার চিত্রাবলীর মধ্যেও স্থানে স্থানে ‘কিউবিজ্‌ম্’কে খুঁজে বার করতে পারবে।’

 তিনি হাস্যরঞ্জিত মুখে শিষ্ট ও মিষ্ট ভাবে সকলের সঙ্গে আলাপ করতেন বটে, কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের মতন মজলিসী মানুষ ছিলেন না। তাঁর হাবভাবে একটা আভিজাত্যের ভাবও থাকত, জনতার ভিতরেও তিনি নিজেকে আলাদা ক’রে রাখতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত “বিচিত্রা”র সাপ্তাহিক আলোচনা-সভায় কোন দিনই তাঁকে অনুপস্থিত দেখি নি, কিন্তু সাধারণতঃ তিনি

৬৯