পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

থাকতেন নির্বাক শ্রোতা হয়ে। কেবল অভিনয়ের আয়োজন হ’লে অংশ গ্রহণ করতেন।

 তাঁর সদাশয়তা ও গুণগ্রাহিতার একটি দৃষ্টান্ত জানি। পৃষ্ঠদেশে দারিদ্র্যের ভার নিয়ে দীনেশচন্দ্র সেন প্রথম জীবনে যখন একান্তভাবে সাহিত্যসাধনায় নিযুক্ত হয়ে আছেন, তখন তিনি নানাভাবে তাঁকে সাহায্য করবার চেষ্টা করেছেন।

 কিন্তু পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ কয়েক বৎসর কেটে গিয়েছে দারুণ এক ট্রাজেডির ভিতর দিয়ে। দেহ লোপ পাবার আগেই মৃত্যু হয়েছিল শিল্পী গগনেন্দ্রনাথের। শেষ জীবনে তিনি পক্ষাঘাত রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে চোখে দেখলে কিছু বোঝবার যো ছিল না, দেহ যেন স্বাস্থ্যসুন্দর—চলছেন, ফিরছেন, হাসছেন, গাড়ীতে চ’ড়ে বেড়াতে যাচ্ছেন। কিন্তু কথা কইতেও পারতেন না, ছবি আঁকতেও পারতেন না।

 তাঁর পুত্র শ্রীকনকেন্দ্রনাথ একদিন বললেন, ‘বাবার মুখ দেখে মনে হচ্ছে তাঁর কোন খাবার খেতে ইচ্ছে হয়েছে। কি খেতে চান সেটা তিনি বার বার লিখে জানাবার চেষ্টা করছেন কিন্তু লিখতে পারছেন না।’

 তাঁর সঙ্গে শেষ যেদিন দেখা হয়, সেদিনের কথাও ভুলি নি। দোতলার বৈঠকখানায় অবনীন্দ্রনাথের কাছে ব’সে আছি আমরা কয় বন্ধু। এ কথা সে কথা হচ্ছে। এমন সময়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন গগনেন্দ্রনাথ। দেখলে কিছুতেই সন্দেহ হয় না যে তাঁর দেহের মধ্যে বাস করছে জীবন্ত মৃত্যু। চিত্রশিল্পী চারু রায় ও আমি গাত্রোত্থান ক’রে তাঁর কাছে গিয়ে প্রণাম করলুম। আমাদের দেখে তাঁর সৌম্য মুখ প্রসন্ন হাস্যে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল, তিনিও সাগ্রহে আমাদের কি বলতে উদ্যত হলেন, কিন্তু কিছুই বলতে

৭০